খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলে আগ্রহ নেই বাদশা গ্রুপের

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী ও মিডল্যান্ড ব্যাংকের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসা বাদশার পারিবারিক মালিকানাধীন বাদশা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। শুরুতে এ গ্রুপের মূল ব্যবসা ছিল সাবান উৎপাদন ও বিপণন। পরে বাড়তি মুনাফার লোভে জাহাজ ভাঙা ও অন্যান্য ব্যবসায় এলেও ব্যবসায়িক অনভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাবে ব্যর্থ হন। এতে এ গ্রুপের সঙ্গে লেনদেনে থাকা আটটি ব্যাংকের প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা অর্থায়ন করে বিপাকে পড়ে। আর ঋণ পুনঃতফসিলে আবেদনও করেনি।  সূত্রমতে, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইসা বাদশার পিতা বাকলিয়ার বাসিন্দা মরহুম বাদশা মিয়া সওদাগরের উদ্যোগে তালা মার্কা সাবান ব্যবসার মাধ্যমে বাদশা গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়। পরে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায় আসেন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা। বর্তমানে এ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আযান লিমিটেড, এমএম ইন্টারপ্রাইজ, ঝুমা এন্টারপ্রাইজ, বাদশা অয়েল মিলস অ্যান্ড সোপস ফ্যাক্টরি ও মুসা অ্যান্ড ইসা ব্রাদার্স প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান।

এ গ্রুপের একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণগুলো বেশিরভাগ এখন খেলাপি। এর মধ্যে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় এমএম এন্টারপ্রাইজ ও ঝুমা এন্টারপ্রাইজের প্রায় ১৭০ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংক জুবিলী রোড শাখায় মুছা অ্যান্ড ইসা ব্রাদার্সের ১৬৮ কোটি টাকা, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ঝুমা এন্টারপ্রাইজের ৫৬ কোটি টাকা, এক্সিম ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় মুসা অ্যান্ড ইসা ব্রাদার্সের ১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা, মার্কেটাইল ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় প্রায় ৭৫ কোটি টাকা, মেঘনা ব্যাংক জুবিলী রোড শাখায় প্রায় ৬০ কোটি, প্রাইম ব্যাংকে ঝুমা এন্টারপ্রাইজের পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এছাড়া আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকেও ঋণ আছে। আর বিপুল পরিমাণে ব্যাংকের পাওনা রেখে বছর দুয়েক আগে তিনি কানাডায় প্রবাসী হন।

পাওনাদার ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেন, পলাতক ব্যবসায়ী ইসা বাদশা ও তার ভাইয়ের মালিকানাধীন বাদশা গ্রুপের ঝুমা এন্টারপ্রাইজ ও মুসা অ্যান্ড ইসা ব্রাদার্সের খেলাপি ঋণ আদায়ে গত বছরের ২৮ নভেম্বর ওয়ান ব্যাংক জুবিলী রোড শাখা অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। একই দিনে অর্থঋণ আদালতে ঝুমা এন্টারপ্রাইজর পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ টাকা আদায়ে একটি মামলা করে প্রাইম ব্যাংক। এছাড়া ৩১ মে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা ঝুমা এন্টারপ্রাইজের ৫৬ কোটি টাকার জন্য মামলা করে। এছাড়া এক্সিম ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা খেলাপির দায়ে মুসা অ্যান্ড ইসা ব্রাদার্সের ১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকার বিপরীতে বাকলিয়া ও কোতোয়ালি থানার প্রায় ৫২ ডিসিমেল জমি বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রয়ে নিলামে তুলছে, যা আগামী ২৩ জানুয়ারি ব্যাংকটির খাতুনগঞ্জ শাখায় অনুষ্ঠিত হবে। আরও কয়েকটি ব্যাংক পাওনা আদায়ে মামলা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

সম্প্রতি সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকার বাদশা মার্কেটে তৃতীয় তলায় বাদশা গ্রুপের বাণিজ্যিক অফিস। বেশ কয়েকটি টেবিল থাকলেও মাত্র একজন লোক অফিস করছেন। পরিচয় দিয়ে জানতে চাইলে অফিস সহায়ক তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রুপের অবস্থা ভালো নয়। আর অফিসে কথা বলার মতো কেউ নাই। আরেক সময়ে আসলে হয়তো ম্যানেজার সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। মালিকপক্ষের লোকজন অফিসে আসেন কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিক তো পরিবার নিয়ে কানাডায় বসবাস করছেন। শুনেছি ব্যাংকের সঙ্গে ঋণ নিয়ে ঝামেলা চলছে।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক ওয়ান ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বাদশা শিল্প গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠান ঝুমা এন্টারপ্রাইজ এবং মুসা অ্যান্ড ইসা ব্রাদার্সের নামে নেওয়া ঋণ এখন খেলাপি। আর খেলাপির দায়ে হস্তান্তরযোগ্য আইনে এবং অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। এছাড়া বন্ধকিতে থাকা সম্পত্তি নিলামে বিক্রয়ের প্রক্রিয়া চলছে।

তিনি আরও বলেন, কানাডায় অবস্থানকারী এ ব্যবসায়ী তার পরিচিত একজনকে আইনগত ক্ষমতা দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলকরণের জন্য নিযুক্ত করেন। তিনি ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য আবেদন করলেও টাকা জমা দেননি। শুধু আমাদের ব্যাংকে নয়, কোনো ব্যাংকে টাকা জমা দেননি।

এদিকে এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ‘খেলাপি হয়েছে ঋণ। কিন্তু গ্রাহকের কোনো খবর নেই। এখন পর্যন্ত রি-শিডিউলের জন্য আবেদন করেনি। এখন যা মনে হচ্ছে এ ব্যবসায়ী টাকা পাচারকারী, তাই সহজে দেশে আসবেন না।’

উল্লেখ্য, বিভিন্ন ব্যাংকে ঋণখেলাপির দায়ে মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক পদ থেকে বাদ পড়েছেন ইসা বাদশা। পাশাপাশি তিনি ব্যাংকটির অডিট কমিটির সদস্য ছিলেন। ব্যাংকটিতে ইসা ও তার অংশীজনদের নামে মোট পাঁচ শতাংশ শেয়ার আছে

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০