মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটে ক্রেতার আকাল কাটছে না। বিক্রেতা থাকলেও লেনদেন সহজ না হওয়ায় এখানে ক্রেতা পাওয়া মুশকিল, যার জের ধরে আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে এই মার্কেটে থাকা কোম্পানির লেনদেন। বছরের ব্যবধানে লেনদেন হ্রাস পেয়েছে ৬৮ শতাংশের বেশি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ওটিসি মার্কেটে শেয়ার লেনদেন আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে ৬৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ বছরে ওটিসি মার্কেটে মোট এক কোটি ৫৩ লাখ ৭৬ হাজার ৪৭৪টি শেয়ার লেনদেন হয়, যার মূল্য ২২ কোটি ৩২ লাখ ২৫ হাজার ৮৯২ টাকা। অপরদিকে ২০১৮ সালে এ মার্কেটে শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ ছিল দুই কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩৪টি শেয়ার, যার মূল্য ছিল ৭০ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার ৬২২ টাকা।
ওটিসি মার্কেটে ৬৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত থাকলেও লেনদেন রয়েছে স্বল্পসংখ্যক কোম্পানির, সংখ্যায় যা ২০ থেকে ২২টি। এর মধ্যে ১৪ থেকে ১৫টি কোম্পানির নিয়মিত লেনদেন দেখা যায়। কিন্তু ২০১৯ সালে তাও ছিল অনিয়মিত। ওই বছর প্রথম সাত মাসে মার্কেটে লেনদেন হয়েছে মাত্র ২০ কোটি টাকার শেয়ার। পরের পাঁচ মাসে লেনদেন হয় ২২ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার।
গত বছর শেয়ার লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছেÑআলফা টোব্যাকো, এ্যাপেক্স ওইভিং, মনোস্পুল পেপার, বেঙ্গল বিস্কুট, ঢাকা ফিশারিজ, যশোর সিমেন্ট, লেক্সকো, মডার্ন ইন্ডাস্ট্রিজ, মুন্নু ফেব্রিকস, পেপার প্রসেসিং, রহমান কেমিক্যাল, সোনালী পেপার ও ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েস।
জানা যায়, লেনদেন সহজ না হওয়ায় এ মার্কেটে বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা আটকে রয়েছে। বিশেষ করে ক্রেতার অভাব থাকায় চাইলেই কেউ এ মার্কেট থেকে বের হতে পারছেন না। বিনিয়োগকারীরা চান তাদের কথা ভেবে দ্রুত এ মার্কেটের পুনর্গঠন করা হোক।
কিন্তু গত দুই বছরেও এই মার্কেটের পুনর্গঠন হয়নি। দুই বছর আগে এ মার্কেটের পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তারপর এর অগ্রগতি থেমে যায়। এখন পর্যন্ত বিষয়টি উদ্যোগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক ও ডিবিএর সভাপতি শাকিল রিজভী বলেন, এই মার্কেটে লেনদেন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ এখানে ক্রেতা পাওয়া মুশকিল। কম দরে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে এখান থেকে বের হতে চান বিনিয়োগকারীরা। এর থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে মার্কেটের পুনর্গঠনসহ লেনদেন পদ্ধতি সহজ করতে হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওটিসিতে থাকা কিছু প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব একবারেই নেই। কোম্পানিগুলো হলোÑবাংলাদেশ ইলেকট্রিসিটি মিটার কোম্পানি (বেমকো), চিক টেক্সটাইল, রাসপিট ডেটা, রাসপিট ইনকরপোরেশন, এম হোসেন গার্মেন্ট, ফার্মাকো, আমান সি ফুড, জার্মান বাংলা ফুড, মেটালিক্স, রাঙামাটি ফুড ও সালেহ কার্পেট। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় চার কোটি ৮৭ লাখ শেয়ার রয়েছে, আনুমানিক যার বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি।
এদিকে বর্তমানে ডিএসইর ওটিসিতে ৬৪টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত আছে। এর মধ্যে মাত্র ৩২টি বিদ্যমান আইন অনুসরণ করে। এ ৩২টিকেই শুধু ওটিসিতে রেখে বাজার পুনর্গঠনের সুপারিশ করা হয়েছিল, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৮ সালে আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। কমিটির দেওয়া রিপোর্ট আমাদের হাতে এসেছে। রিপোর্ট দেখে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কিন্তু কবে নাগাদ এটা হবে তা বলা যাচ্ছে না।