মোবাইল ফেরিভ্যান বাজার

খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অস্থায়ী ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে বিক্রেতারা নানা ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। নগরীর প্রধান সড়ক, মূল বাজারসংলগ্ন অলিগলি, স্কুল-কলেজের সামনে, অথবা আবাসিক এলাকায় চোখে পড়ে তাদের কার্যক্রম। জীবিকার তাগিদে নিম্নআয়ের অনেকে বেছে নিচ্ছেন উপার্জনের এ পথ। স্থানীয়দের কাছে ‘মোবাইল ফেরিভ্যান বাজার’ নামে পরিচিত তাদের উদ্যোগ।

নগরীর মুজগুন্নী-বয়রা, সোনাডাঙ্গা ও নিরালা আবাসিক এলাকাসংলগ্ন কয়েক ফেরিভ্যান বাজার বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মূলত বড়বাজার, নতুন বাজার, রূপসা কাঁচাবাজার, সোনাডাঙ্গা কাঁচাবাজার, গল্লামারি বাজার অথবা উপশহর এলাকার পাইকারি বাজার থেকে নানা ধরনের পণ্য সংগ্রহ করেন। পরে বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বিক্রি করেন।

কথা হয় বিক্রেতা সোহেল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি মূলত সবজির ব্যবসা করি। ফেরিভ্যানের পেছনে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। আর পণ্য কিনতে দিনপ্রতি দুই হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। অনেক সময় পণ্যভেদে কম-বেশি মূলধন প্রয়োজন পড়ে।’ ব্যবসা ভালো হলে বিক্রেতারা ভ্যান গাড়িগুলোয় ইঞ্জিন যুক্ত করেন। এতে অল্প সময়ে বিভিন্ন স্থান ঘুরে পণ্যের বিপণন করা যায়।

নগরজীবনের ব্যস্ততার কারণে অনেকে সময়ের অভাবে বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করতে পারেন না। তাদের সুবিধায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে অথবা রাস্তার মোড়ে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে হাজির হন মোবাইল ফেরিভ্যান বিক্রেতারা।

অতীতে একটা সময় ছিল যখন কাঁধে বাঁশের চটা ও মোটা দড়িযুক্ত জালের ঝুড়িতে ফেরি করে গ্রামগঞ্জে বিক্রি করা হতো গৃহস্থালি নিত্যব্যবহার্য বাসনকোসন ও প্লাস্টিক সামগ্রী। এ পেশার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তী সময়ে ফুটপাতের হকার উচ্ছেদ করা হয়। সময়ের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়। এসব কারণে ফেরিওয়ালাদের সে স্থান যেন দখল করে নিয়েছে ‘মোবাইল ফেরিভ্যান বাজার’।

নগরীর মূল পাইকারি বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের পাশাপাশি সরাসরি ক্ষেত, মাছের ঘের ও হাঁস-মুরগির ফার্ম থেকে তাজা শাকসবজি, মাছ ও ডিম বিক্রি করেন অনেক বিক্রেতা।

অনেক ক্রেতাই আজকাল মোবাইল ফেরিভ্যান বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় টাটকা শাকসবজি, মাছ, ডিম ও ফলমূল নিশ্চিন্তে কেনেন। অনেকে ফেরিভ্যানে নানা ধরনের পোশাক, ব্যাগ, জুতা, শিশুদের খেলনা, সিটি অলংকার, ইলেক্ট্রনিকস অথবা প্লাস্টিক পণ্য বিক্রি করেন।

অনেক ক্রেতার ঘরে রেফ্রিজারেটর নেই। তারাই মূলত মোবাইল ফেরিভ্যান বাজারের খরিদ্দার। তাদের অনেকের মতে, রেফ্রিজারেটরে মাছ ও সবজি দীর্ঘদিন রেখে খাওয়ার চেয়ে প্রতিদিন টাটকা পণ্য কিনে খাওয়টাই স্বাস্থ্যসম্মত।

কয়েক বিক্রেতা বলেন, বেকারত্ব থেকে ‘মোবাইল ফেরিভ্যান বাজার’ মুক্তি দিলেও মূল বাধা পুঁজিস্বল্পতা। এজন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্বল্প কিংবা বিনা সুদে এ ক্ষুদ্র ব্যবসায় মূলধনের জোগান দিতে পারে। তাহলে নিম্নআয়ের অনেক মানুষের বিকল্প আয়ের পথ সুগম হবে। একই সঙ্গে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা উচিত এ ধরনের উদ্যোগ। বিশেষ করে নগর কর্তৃপক্ষ ভ্রাম্যমাণ বাজার পরিদর্শন শাখার মাধ্যমে এসব মোবাইল ফেরিভ্যান বাজার বিক্রেতাদের জন্য ক্ষুদ্র ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা পরিচালনার লাইসেন্স দিয়ে নির্দিষ্ট বিক্রিবাট্টার স্থান ও সময় নির্ধারণ করতে পারে। বিক্রির অঞ্চল বিভাজনের মাধ্যমে শ্রেণিবদ্ধ ব্যবসায়িক কাঠামো দাঁড় করাতে পারে।

প্রতীপ মণ্ডল, খুলনা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০