নিজস্ব প্রতিবেদক: পরপর চারজন সংসদ সদস্যের মৃত্যুকে জাতীয় সংসদের জন্য একটা কষ্টকর বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে গতকাল সংসদে উত্থাপিত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কষ্টকর। এবারের নির্বাচনের পর অনেক সদস্যদের আমরা হারিয়েছি। জানি না এবার আমাদের সংসদের কি রকম একটা দুর্ভাগ্য যে, পরপর আমাদের চারজন সংসদ সদস্য মৃত্যুবরণ করলেন।’
তিনি বলেন, ‘ডা. ইউনুস চলে গেলেন, ডা. মোজাম্মেল সাহেব মারা গেলেন, মান্নান এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার তিন দিন পর শুনলাম সে আর নেই। আবার আজকে সকালে ইসমাত আরা সাদেক এভাবে মারা গেলেন।’
গত ২৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. ইউনূস আলী সরকার, ৯ জানুয়ারি রাতে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. মোজাম্মেল হোসেন এবং ১৮ জানুয়ারি বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান মারা যান। আর মঙ্গলবার সকালে মারা যান সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেক।

মারা যাওয়া সংসদ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ইসমাত আরা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনাকে মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব দিতে চাইলে উনি তা পালনে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। পারবেন কি নাÑতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তবে আমি তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেই। অত্যন্ত গোছালোভাবে তিনি কাজ করতেন। প্রতিটি কাজ তিনি সুষ্ঠুভাবে সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে করতেন। উনার একাগ্রতা, সততা ছিল অসামান্য।’
সম্প্রতি ইসমাত আরার সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, ‘উনি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা করেন। তখন অসুস্থতার কথা বললেন, অনেকক্ষণ আলাপ-আলোচনা হলো। একটা অপারেশন করার কথা জানালেন। এ বয়সে অপারেশন করবেন কি নাÑতা চিন্তা করতেও বললাম। অসুস্থতার খোঁজখবর নিলাম, বললাম ঘাবড়াবেন না, চিকিৎসা আধুনিক হয়ে গেছে। এটাও বললাম আমাদের সবার তো বয়স হয়ে গেছে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। জবাবে তিনি বললেন, আমি তো আপনার থেকে বড়। আমি বললাম মৃত্যু তো বয়স দেখে আসে না। যে কোনো সময়েই আসতে পারে। উনি চলে গেলেন, হাসপাতালে ভর্তি হলেন। পরে শুনলাম উনি স্ট্রোক করেছেন, অবস্থা ভালো না। অপারেশন পর্যন্ত উনাকে নেওয়াই গেল না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মৃত্যু এভাবেই আসে। তবে উনাকে ভুগতে হলো না, কষ্ট করতে হলো না। এটাই হচ্ছে বড় কথা।’
এলাকার উন্নয়নে ইসমাত আরা সাদেক অনেক কাজ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তিনি এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন। নির্বাচনী এলাকা কেশবপুর আলোকিত করেছেন। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। হঠাৎ করে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন তা ভাবতে পারিনি।’
সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর আনা শোক প্রস্তাবের ওপর তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, উপাধক্ষ্য আবদুস শহীদ, কাজী নাবিল আহমেদ, ওয়াসিকা আয়শা খানম, আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশা ও জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নানসহ বেশ কয়েকজন আলোচনা করেন।
সর্বসম্মতক্রমে শোকপ্রস্তাব গ্রহণের পর রেওয়াজ অনুযায়ী সংসদ অধিবেশন মুলতবি করেন স্পিকার। এর আগে ইসমাত আরা সাদেকের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়।