ক্রীড়া ডেস্ক : লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের উইকেটে বোলারদের জন্য ছিল না আহামরি কিছু। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আগে ব্যাট করতে নেমে সেটা ভুল প্রমাণ করেন। শুরু থেকেই দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও নাঈম শেখ খেলেন ধীরে। তারা অবশ্য জুটি বড় করেছিলেন। কিন্তু খোলস ছেড়ে বের হতে পারেননি। তাদের সতীর্থরাও পারেননি কিছু করে দেখাতে। তাই স্কোর বোর্ডেও ওঠেনি পর্যাপ্ত রান। বল হাতে পরে অবশ্য শুরুটা ভালো করেছিল সফরকারীরা। কিন্তু অভিজ্ঞ শোয়েব মালিকের ব্যাটিং নৈপুণ্যের কাছে হেরে পাকিস্তান সফর শুরু করেছে টিম টাইগার্স।
গতকাল সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ হেরেছে পাঁচ উইকেটে। এর ফলে সফরকারীরা তিন ম্যাচ সিরিজে পাকিস্তানের পেছনে পড়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
টস হেরে গতকাল আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে বাংলাদেশ স্কোর বোর্ডে তুলতে পারে মাত্র ১৪১ রান। যে লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পাকিস্তানের লাগে ১৯.৩ ওভার। এ জন্য তারা হারায় মাত্র পাঁচটি উইকেট।
টি-টোয়েন্টিতে ১৪১ রানের ওপর ভর করে আধুনিক যুগে ম্যাচ জেতা বেশ কঠিন। তবে শুরুতে এ কথার ভুল প্রমাণের আভাস দিয়েছিলেন শফিউল ইসলাম। এ বাঁহাতি প্রথম ওভারেই পাকিস্তান ইনিংসে কোনো রান না যোগ হতেই বাবর আজমকে ফিরিয়ে দেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে মোহাম্মদ হাফিজকে তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমান। যে কারণে টাইগারদের আশা বেঁচে ছিল। কিন্তু তৃতীয় উইকেটে আহসান আলির সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে টাইগারদের চিন্তা বাড়িয়ে দেন অভিজ্ঞ শোয়েব মালিক। তারা গড়েন ৪৬ রানের জুটি। শেষ পর্যন্ত বিপজ্জনক এ জুটি আহসানকে তুলে নিয়ে ভাঙেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। এর কিছুক্ষণ পরই ইফতেখার আহমেদকে দারুণ এক ডেলিভারিতে পরাস্ত করে উইকেটের পেছনে লিটনের ক্যাচে ফিরিয়ে দেন শফিউল। তাতে অবশ্য ক্ষতি হয়নি পাকিস্তানের। কেননা অন্য প্রান্তে যে ছিলেন শোয়েব মালিক। এ ডানহাতি ধীরে ধীরে স্বাগতিকদের জয়ের দিকে নেন। একপর্যায়ে ৪০ বলে ৫ চারে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এ ডানহাতি। শেষ পর্যন্ত ৩ বল আগেই পাকিস্তানের জয় নিশ্চিত করেন অভিজ্ঞ এ তারকা। ৪৫ বলে ৫ চারে ৫৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মালিক। এ সুবাদে তিনিই হয়েছেন ম্যাচসেরা।
ছয় মাস পর জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরে তামিম ইকবাল গতকাল ব্যাট হাতে শুরুটা করেছিলেন দেখেশুনে। নাঈম শেখও সতীর্থের দেখানো পথেই হাঁটেন। সে পথ ধরেই তারা উদ্বোধনী জুটিতে তারা যোগ করেন ১১ ওভারে ৭১ রান। এর মধ্যে ৩৪ বলে ৪ চার ও ১ ছয়ে তামিমের রান ছিল ৩৯। হয়তো এরপরই এ বাঁহাতি বের হতে খোলস ছাড়েন। কিন্তু নাঈমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে এ বাঁহাতি ফেরেন রান আউটে। এদিকে লিটন দাসও পারেননি ঝলক দেখাতে। তিনিও কাটা পড়েন রান আউটের ফাঁদে পড়ে। এক প্রান্ত আগলে রেখে মোহাম্মদ নাঈম চেষ্টা করেছিলেন খোলস ছেড়ে বের হতে কিন্তু পারেননি তিনিও। শাদাব খানের বলে বড় শর্ট খেলতে গিয়ে ক্যাচ হয়ে ফেরেন। তার আগে এ বাঁহাতি করেন ৪১ বলে ৩ চার ও ২ ছয়ে ৪৩ রান।
শুরুতে মন্থর ব্যাটিং করলেও টাইগারভক্তরা আশায় ছিলেন শেষে ঝড় দেখতে। কিন্তু আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা পারেননি তেমন কিছু করতে। যে কারণে নির্ধারিত ওভার শেষে ১৪১ রানেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত যার মাশুল সফরকারীদের দিতে হয়েছে হেরে।
প্রথম ম্যাচে হারলেও ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় পাচ্ছে না বাংলাদেশ। কেননা আজই যে সফরকারীদের সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বেলা ৩টায় সেই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে নামতে হবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪১/৫ (তামিম ৩৯, নাঈম ৪৩, লিটন ১২, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, আফিফ ৯, সৌম্য ৭, মিথুন ৫*; ইমাদ ৩-০-১৫-০, আফ্রিদি ৪-০-২৩-১, হাসনাইন ৪-০-৩৬-০, রউফ ৪-০-৩২-১, মালিক ১-০-৬-০, শাদাব ৪-০-২৬-১)
পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ১৪২/৫ (বাবর ০, এহসান ৩৬, হাফিজ ১৭, মালিক ৫৮*, ইফতিখার ১৬, ইমাদ ৬, রিজওয়ান ৫*; শফিউল ৪-০-২৭-২, মোস্তাফিজ ৪-০-৪০-১, আল আমিন ৪-০-১৮-১, সৌম্য ২.৩-০-২২-০, আমিনুল ৪-০-২৮-১, আফিফ ১-০-৬-০)
ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: শোয়েব মালিক