আমার প্রাণের বর্ণমালা

কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবি অগ্রাহ্য হওয়ার প্রতিবাদ জানায় ঢাকার ছাত্রসমাজ। তারা ধর্মঘট প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে প্রথম রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করে। এভাবে বাংলা ভাষার দাবি রাজপথ-জনপথে আন্দোলন ও প্রত্যক্ষ সংগ্রামে রূপ নেয়। সেই ছাত্র বিক্ষোভে পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ, ফাঁকা গুলি, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপে বহু ছাত্র আহত হয়।

সরকারের এই দমননীতির ফলে ছাত্রদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনে ভাটা পড়েনি। ছাত্ররা প্রাদেশিক পরিষদ ভবনের সামনে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল), বর্ধমান হাউসে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সরকারি বাসভবনে (বর্তমান বাংলা একাডেমি) হাইকোর্ট ও সচিবালয়ের সামনে প্রতিদিন বিক্ষোভ চলতে থাকে। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা খাদ্যমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আফজাল ও শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদকে তাদের পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। শেষ পর্যন্ত এই বিক্ষোভ দমাতে তলব করা হয় সেনাবাহিনীকে। পূর্ব পাকিস্তানের তদানীন্তন জিওসি ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খানের নির্দেশে পীরজাদা (একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার) পদাতিক সৈন্য নিয়ে ছাত্রদের দ্বারা ঘেরাও হওয়া পরিষদ ভবন থেকে খাজা নাজিমুদ্দিনকে পশ্চাৎদ্বার ও বাবুর্চি খানার মধ্য দিয়ে বের করে আনে।

বাংলা ভাষা আন্দোলন প্রত্যক্ষ সংগ্রামে রূপ নেয় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ। প্রথম সপ্তাহেই আন্দোলন এমন ব্যাপকতা লাভ করে যে, প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে নি¤েœাক্ত চুক্তি করতে বাধ্য হন। ১৯৪৮ সালের ২৯ ফেব্রæয়ারি থেকে বাংলা ভাষার প্রশ্নে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে। পুলিশের অত্যাচারের অভিযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দেবেন।

১৯৪৮ সালে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ববাংলা সরকারের ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারি আলোচনার জন্য যেদিন নির্ধারিত হয়েছিল, সেদিন বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা এবং একে পাকিস্তান গণপরিষদ ও কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষা দিতে উর্দুর সমমর্যাদাদানের জন্য একটি বিশেষ প্রস্তার উত্থাপন করা হবে।

এপ্রিল মাসের ব্যবস্থাপক সভায় এ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে যে, প্রাদেশিক সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি উঠে যাওয়ার পরই তার স্থলে বাংলা সরকারি ভাষা রূপে স্বীকৃত হবে। এই আন্দোলনে যারা অংশগ্রহণ করেছে, তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। ২৯ ফেব্রæয়ারি থেকে পূর্ববাংলার যেসব স্থানে ভাষা আন্দোলনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করা হবে। সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে আলোচনার পর আমি এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হয়েছি, এ আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়নি। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে এ চুক্তিপত্রটি স্বাক্ষর করেন কামরুদ্দীন আহমেদ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০