শেয়ার বিজ ডেস্ক: আগামী ১৫ বছরের মধ্যেই বড় আর্থিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য। অর্থনৈতিক সংস্কার না হলে ২০৩৪ সালের মধ্যে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো অন্তত দুই ট্রিলিয়ন (দুই লাখ কোটি) ডলারের সম্পদ হারাতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, ধারণার চেয়েও অনেক দ্রুত তেলের চাহিদা কমে আসবে। ফলে গালফ কোআপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি) ছয় সদস্য দেশের (সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন) অর্থনীতিতে টান পড়বে। এ ছয়টি দেশে বিশ্বের পাঁচ শতাংশ অপরিশোধিত তেল উৎপাদন হয়। খবর: ব্ল–মবার্গ ও এনডিটিভি।
আইএমএফ বলছে, চূড়ান্ত অর্থনৈতিক সংস্কার না হলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বড় সংকটে পড়তে যাচ্ছে। ২০৩৪ সালের মধ্যেই তারা অন্যতম ঋণী অঞ্চল হয়ে উঠবে। আর মাত্র এক দশকের মধ্যেই তাদের তেল-বহির্ভূত সম্পদও কমে আসবে।
আইএমএফের মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়া বিভাগের পরিচালক জিহাত আজৌর এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ওই অঞ্চলের দেশগুলোর দীর্ঘমেয়াদি এবং কৌশলগত চিন্তা করা প্রয়োজন। কারণ, তেলের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহ উভয় দিকেই কাঠামোগত পরিবর্তন হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘কয়েকটি দেশে ইতোমধ্যে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক সংস্কারের গতি বাড়ানো দরকার। এছাড়া উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যয়ে পরিবর্তন, সরকারি থেকে বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং তেলবহির্ভূত আয়ের উৎসের আরও দ্রুত বিকাশ প্রযয়োজন। আজৌর আরও বলেন, জিসিসিভুক্ত দেশগুলোকে তাদের বর্তমান সম্পদ রক্ষার জন্য অর্থনৈতিক রূপান্তরে আরও আগ্রাসী হতে হবে। যদি এখানেই থেমে যাই, এটা যথেষ্ট নয়।
আইএমএফ বলছে, আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি এবং উৎপাদক দেশগুলো ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে, জ্বালানির বিকল্প উৎস তাদের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছে। সৌদি আরব-সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলো তেল-পরবর্তী যুগের প্রস্তুতি হিসেবে নতুন শিল্পের উন্নয়ন করলেও তা অর্থ-ভাণ্ডার ফুরিয়ে যাওয়া এড়ানোর মতো দ্রুতগতিতে হচ্ছে না।
২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত যখন অপরিশোধিত তেলের বাজার ডুবছিল, সেসময় উপসাগরীয় তেল উৎপাদকরা বাজেটের ব্যয় প্রচুর কমিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ব্যয় কমানোর সঙ্গে তেলের রাজস্ব হ্রাসে তারা সামঞ্জস্য আনতে পারেনি। ফলে ঘাটতি বেড়েছে, যা সম্পদ হ্রাস করেছে। আইএমএফের মতে, চলতি বছর ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও করোনাভাইরাসের হুমকির কারণে তেলের দাম পড়ে গেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরুর আগে যদি বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা আরও নি¤œমুখী হয়, তবে দেশগুলোকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সমস্যা আরও শিগগিরই মোকাবিলা করতে হবে। সংস্থাটির হিসাবে, ২০৪১ সালের দিকে বিশ্বে তেলের চাহিদা সর্বোচ্চ প্রতিদিন ১১৫ মিলিয়ন ব্যারেল হবে, এরপর তা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। তবে আইএমএফ একটি দীর্ঘমেয়াদি সময়সীমার কথাও জানিয়েছে, যখন বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা ও আয় বাড়তে পারে। তাদের মতে, শতাব্দীর মাঝামাঝি না যাওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ উপার্জন নাও হতে পারে এবং শেষ তৃতীয়াংশে তেলের চাহিদা আবার বাড়তে পারে।