মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে প্রবাসীদের আগ্রহ বাড়াতে তেমন কোনো উদ্যোগ না থাকলেও ক্রমেই তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন দেড় লাখেরও বেশি প্রবাসী বিনিয়োগকারী। ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়া এবং সেইসঙ্গে পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো থাকায় তাদের অংশগ্রহণ বেড়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে প্রবাসীর সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার। গত বছরের শেষদিকে যার সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪০ হাজার। অর্থাৎ নতুন বছরে প্রায় দশ হাজার প্রবাসীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে প্রবাসীদের পুঁজিবাজারে আনার জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ থাকলে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো সম্ভব বলে জানান পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তাদের মতে, বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার সর্বনিম্ন ৪ থেকে ছয় শতাংশে নেমে এসেছে। যে কারণে দেশি বা প্রবাসী কেউই ব্যাংকে টাকা রাখতে আগের মতো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অন্যদিকে বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারের মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকায় এর প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন ডিবিএর সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, ‘এখন পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো। অন্যদিকে ব্যাংকে আমানতের সুদের হার অনেক নিচে নেমে গেছে। ফলে সবাই পুঁজিবাজারের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। এখানে কেউ বুঝেশুনে ভালো মানের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারলে ব্যাংকের চেয়ে পুঁজিবাজার থেকে ভালো রিটার্ন আশা করতে পারেন।’
পুঁজিবাজারে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসীর অংশগ্রহণ সব সময় পুঁজিবাজারকে আরও গতিময় করে তোলে। সেইজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত দেশের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি কি কিংবা এর সম্ভাবনা কতটুকু তা প্রবাসীদের জানানো। তারা বাজার পরিস্থিতি জানতে পারলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।’
পুঁজিবাজারে প্রবাসীদের আগ্রহ কীভাবে বাড়ানো যায় এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘তাদের পুঁজিবাজারে আনার জন্য বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না। তারা সবসময় পুঁজিবাজারের খরব রাখেন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দেশি কিংবা প্রবাসী সবাই ব্যবসা করার জন্য পুঁজিবাজারে আসেন। তাই তারা যখন বুঝবেন পুঁজিবাজারে আসা দরকার তখনই তারা এর সঙ্গে যুক্ত হবেন।’
এদিকে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে পুঁজিবাজারে প্রবাসীদের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে পুঁজিবাজারে। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৭০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৬ কোটি টাকার মত। অথাৎ এই হিসাবে ছয় মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নিট বিদেশি বিনিয়োগ (ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) বেড়েছে ২৬ গুণের বেশি।
মোট যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে মুনাফা ফেরত নিয়ে যাওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে, তাকেই নিট বিদেশি বিনিয়োগ বলা হয়। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, টাকার বিপরীতে ডলারের শক্তিশালী অবস্থান, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ এবং অর্থনীতির সূচকগুলো ভালো অবস্থায় থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আবার বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ঝুঁকছেন। তাদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করতে পারলে এই বিনিয়োগ আরও বাড়ার সুযোগ রয়েছে।
Add Comment