মাসুম বিল্লাহ: অবশেষে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতেই বাস্তবায়ন হতে চলেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। এর আগে চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে (জিটুজি) নির্মাণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে মূল কাজ শুরুর আগে সম্পন্ন করতে হবে ভূমি অধিগ্রহণের মতো প্রস্তুতিমূলক কাজ। এ লক্ষ্যে ‘সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প’ শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে ও সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এরই মধ্যে সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) প্রস্তুত করেছে বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি। সম্প্রতি প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই প্রকল্পটির বিষয়ে মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর তা বিবেচনার জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উপস্থাপন করা হবে।
খসড়া ডিপিপি থেকে জানা যায়, সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। এর সিংহভাগই যাবে ভূমি অধিগ্রহণে। প্রকল্পটির আওতায় যেসব কার্জক্রম হাতে নেওয়ার উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে এনজিও সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, এক্সপ্রেসওয়ে এলাকার বিভিন্ন পরিষেবা সংযোগ স্থানান্তর, সরকারের চাহিদা মোতাবেক পিপিপি কনসেশনারের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং স্বাধীন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণ করা। প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের মার্চ থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে এ প্রকল্পটি চলমান থাকা অবস্থায় এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের মূল প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে।
এটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, কেবল ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। তিন ধাপে ৭০০ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রথম ধাপে ঢাকা থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ৩৯৯ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে চার হাজার ৭৬৭ কোটি টাকা। দ্বিতীয় ধাপে কুমিল্লা থেকে ফেনী পর্যন্ত ১০৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আর তৃতীয় ধাপে ফেনী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ২৯১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তিন হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। আর তিন ধাপে পুনর্বাসন কাজে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৩৭২ কোটি টাকা।
জানা গেছে, সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হলে মূল প্রকল্প বা ভৌতকাজ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে পিপিপির আওতায় চীনা প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলে জানা গেছে। প্রাথমিকভাবে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক শেয়ার বিজকে বলেন, কয়েক বছর আগেই পিপিপিতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে মাঝে চীনের কয়েকটি কোম্পানি জিটুজি ভিত্তিতে এটি নির্মাণে আগ্রহ দেখায়। এজন্য চারটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করা হয়েছিল। তবে চীনের অর্থায়নের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এখন সরাসরি কোনো কোম্পানিকে কাজ দেওয়া যাবে না। বরং সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে কাজ দিতে হবে। এতে চীন সরকারের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই পিপিপিতে এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরপর মূল প্রকল্পটি নেওয়া হবে। এতে চীন সরকার এগিয়ে এলে জিটুজিতে এটি বাস্তবায়ন হতেও পারে।
ছয় বছরমেয়াদি সাপোর্ট টু ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পে প্রথম বছরে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা। দ্বিতীয় বছর অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রাক্কলন করা হয়েছে ছয় হাজার ৫১২ কোটি, এর পরের অর্থবছর পাঁচ হাজার দুই কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৪৭২ কোটি, এর পরের অর্থবছর ৬০ কোটি এবং প্রকল্পের সর্বশেষ অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা।
Add Comment