নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: প্লট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের মেয়াদকালে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না; তার অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুসন্ধানে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের প্রমাণ পেলে আবদুচ ছালামকে দুদকের মামলা ও তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে। এমনকি আদালতের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হতে পারে। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, পুরো মেয়াদেই আবদুচ ছালামের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দ নিয়ে বিভিন্ন মহলের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। নিজ মেয়াদের শেষ সময়ে ১০ কোটি টাকা মূল্যের প্লট তার পাঁচ অনুগতের হাতে তুলে দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন আবদুচ ছালাম। সিডিএর চেয়ারম্যান থাকাকালীন গত ৩১ মার্চ সিডিএর কল্পলোক ও অনন্যা আবাসিক এলাকার পাঁচটি প্লট বরাদ্দ দিয়েছিলেন আবদুচ ছালাম। তবে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ছালামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সিডিএর দুই বোর্ড সদস্য কেবিএম শাহজাহান ও জসিম উদ্দিন শাহকে। এছাড়া আবদুচ ছালামের নিজস্ব ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) তারেক গণির মা জাকিয়া বেগম, নিজ পারিবারিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ওয়েল গ্রুপের কর্মকর্তা সেতু বড়ুয়া ও হামিদ উল্লাহ নামের আরেক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে তিনটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে কেবিএম শাহজাহানকে অনন্যা আবাসিক এলাকায় এবং অন্যদের কল্পলোক আবাসিক এলাকায় প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
সংশ্লিদের মতে, নিয়মানুযায়ী সিডিএর কোনো প্লট বরাদ্দ দিতে হলে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আবেদন আহ্বান করতে হয়। এরপর আবেদন যাচাই-বাছাই করে কোটার ভিত্তিতে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি।
এদিকে, প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে আবদুচ ছালামের অনিয়মের অনুসন্ধান করার দায়িত্ব পালন করছেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আবদুচ ছালামের মেয়াদে সিডিএর প্লট বরাদ্দে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা অনুসন্ধান করছে দুদক। অনিয়মের প্রমাণ পেলে মামলা করবে দুদক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগরে দায়িত্ব পালন করা দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক মো. লুৎফল কবির চন্দন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘অনুসন্ধান চলছে, এমন কোনো বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’
এ ব্যাপারে সিডিএ বোর্ড সদস্য জসিম উদ্দীন শাহ বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে আলাদা বিষয়। মন্ত্রণালয় যাদের অনুমোদন দিয়েছে, তারাই প্লট পেয়েছেন, সিডিএ প্লট দেয়নি। সিডিএ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে কাজ করছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুচ ছালাম বলেন, ‘আমি প্লট দেইনি, প্লট দিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্লট দেওয়ার ইখতিয়ার আমার নেই।’
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম টানা ১০ বছর ধরে সিডিএর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি সিডিএর ইতিহাসে রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে ওই পদে নিয়োগ পান। চেয়ারম্যান হিসেবে আবদুচ ছালামের শেষ কর্ম দিবস ছিল ২২ এপ্রিল। আর ২৩ এপ্রিল সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহিরুল আলম দোভাষ ডলফিন।