কোয়েলে দিন বদলের স্বপ্ন

কাজী আশরাফুল আজাদ: যে কোনো উদ্যোগের শুরুতে অনেক বাধা-বিপত্তি আসে। এসব গায়ে না মেখে লেগে থাকলে সফল হওয়া যায়। যারা সফল হন, তাদের অনুসরণ করলে আরও নতুন উদ্যোগ শুরু হয়। নানা খাতের সেসব সফল উদ্যোক্তা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক আয়োজন
অনেকটা শখের বশে কয়েক মাস আগে এক হাজার কোয়েল পাখি কিনেছিলেন ইকরামুল হোসেন। পাখিগুলো কিনতে খরচ করেছিলেন ৬ হাজার টাকা। কোয়েলের খাবার ও ওষুধবাবদ ব্যয় হয় আরো ১৪ হাজার টাকা। তার সেই শখ অল্প সময়ের মধ্যে লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দোহাকুলা বিশ্বাসপাড়ায় বাড়ি ইকরামুল হোসেনের। এখন বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পালন করে ভাগ্য বদলে ফেলেছেন তিনি। এভাবে সংসারের অভাব-অনটন দূর করেছেন। সাত সদস্যের পরিবার ইকরামুলের। পরিবারকে সচ্ছল করতে কোয়েলের পেছনে বিনিয়োগ করেছেন। এখন তার মাসিক আয় ১২ থেকে ১৮ হাজার টাকা। এ আয়ে ভালোভাবেই চলে যাচ্ছে তাদের।

৩০ বছরের যুবক ইকরামুলের জীবনের গল্প জেনে নেওয়া যেতে পারে। ১৫ বছর আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়েছিলেন। সে সময় মারা যান তার বাবা। মা ও ছোট দুই ভাইবোনকে নিয়ে শুরু হয় অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটানো। তবে পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন ইকরামুল। এভাবে চলতে চলতে ২০০৭ সালে এসএসসি পাস করেন। ভর্তি হন কলেজে। তবে বেশিদিন কলেজমুখো হতে পারেননি। অর্থাভাবে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে নেমে পড়ে জীবনযুদ্ধে।

ইকরামুলের খামারে এক হাজার পাখির মধ্যে ডিম পেড়েছে ৩০০ থেকে ৫০০টি। এ ডিম ফুটিয়ে ১৫০-২০০ টি বাচ্চা পেয়েছেন। ইকরামুল জানান, ২০ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে ২৫ দিন পর ডিম বাদে বাচ্চাগুলো ২৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। লাভ হয় সাত হাজার টাকা।
কোয়েলের আদি জন্মস্থান জাপানে। কোয়েল পাখি পালনে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হয় না। আমাদের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য উপযোগী। বাড়ির যে কোনো স্থানে পালন করা যায়। একটি মুরগির জায়গায় অনায়াসে ১০টি কোয়েল রাখা যায়। কোয়েলের রোগব্যাধি অপেক্ষাকৃত কম হয়। পোলট্রি খামারের মতো দুর্গন্ধও ছড়ায় না। খাবারেও কোনো ঝামেলা নেই। পাঁচ থেকে সাতদিন বয়সী বাচ্চার পরিচর্যা করতে হয়। গল্পচ্ছলে কথাগুলো বলেন ইকরামুল হোসেন।

ইকরামুল জানান, ‘শখের বশে কোয়েল পাখি পালন শুরু করেছিলাম। এ পাখি চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি। তবে আর্থিক সহায়তা পেলে ব্যবসার পরিধি বাড়িয়ে আরও লাভবান হতে পারতাম।’

যশোর