শেয়ার বিজ ডেস্ক: কক্সবাজার এলাকায় বন উজাড় রোধ এবং এ অঞ্চলে জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের তিনটি সংস্থা মিলে শুরু করল সেফ অ্যাকসেস টু ফুয়েল অ্যান্ড এনার্জি প্লাস লাইভলিহুডস (সেফ প্লাস) প্রকল্প। গতকাল রাজধানীর এক হোটেলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) যৌথ উদ্যোগে ‘সেফ প্লাস’ প্রকল্প গঠন করা হয়, যার মাধ্যমে বিভিন্নভাবে, যেমন তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) ও স্টোভ বিতরণ, পুনর্বনায়ন এবং লাইভলিহুডস কার্যক্রমের দ্বারা অধিকতর খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে কাজ করা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এলপিজি স্টোভ ও গ্যাস বিতরণের ফলে মানুষের জ্বালানি কাঠের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে। ফলে জ্বালানি কাঠ ব্যবহারের মাধ্যমে সৃষ্ট পরিবেশের ক্ষতি রোধ করা যাবে। পুনর্বনায়ন কার্যক্রম বনসম্পদ পুনরুদ্ধার এবং সেইসঙ্গে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কাজ করবে। লাইভলিহুড ও সেল্ফ রিলায়েন্স কার্যক্রমের মাধ্যমে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়, যার মাধ্যমে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পটির রূপরেখা তৈরি করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সেফ প্লাস প্রকল্পটি এখন একটি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে রূপ নিল, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার উন্নয়ন সাধন করা হবে।
অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শাহ কামাল বলেন, কক্সবাজারের পরিবেশ-বিষয়ক ব্যাপারগুলো চিহ্নিত করতে এবং এ নিয়ে কাজ করতে জাতিসংঘকে সঙ্গে পেয়ে আমরা খুশি। আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের এ ব্যাপারে আরও সহযোগিতা করার ওপর গুরুত্বারোপ করছি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতিসংঘ উইংয়ের প্রধান সুলতানা আফরোজ জাতিসংঘের তিন সংস্থাকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সরকার ও এদেশের জনগণ যে উদারতার পরিচয় দিয়েছে, তা দৃষ্টান্তমূলক। এখন এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব বাংলাদেশ যেন এ বোঝা একাই বহন না করে এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে এ সংকটের টেকসই সমাধান আসে।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যতদিন না রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন শেষ হবে, ততদিন পর্যন্ত সেফ প্লাস প্রকল্প চালিয়ে যাওয়া উচিত।
এফএও বাংলাদেশের প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন বলেন, সেফ প্লাস জাতিসংঘের এ তিনটি সংস্থা ও সরকারি সংস্থাগুলোর কারিগরি দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যার মাধ্যমে কক্সবাজারের জনগোষ্ঠীর নিত্যনতুন প্রয়োজনগুলো মেটানো হবে। তিনি আরও বলেন, এটি উন্নততর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি ও সামাজিক সংহতিকে মজবুত করার মতো বিভিন্ন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আইওএম বাংলাদেশের চিফ অব মিশন গিয়োর্গি গিগাওরি বলেন, শরণার্থী ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানবিক ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য এ সেফ প্লাসকে একটি প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা করতে পেরে আইওএম খুশি।
ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ রিচার্ড রেগান বলেন, কক্সবাজারের জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চাবিকাঠি হলো পরিবেশকে রক্ষা করা ও জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করা। তিনি বলেন, জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে একত্রে কাজ করার মাধ্যমে আমরা সমন্বিত ও সর্বাত্মক কার্যক্রম নিশ্চিত করে চলেছি, যার মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয়ের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করা যাবে এবং এর পাশাপাশি কক্সবাজারের জনগণের জীবিকার সুযোগ বৃদ্ধি করা যাবে।
প্রসঙ্গত, এ বছরজুড়ে সেফ প্লাসের মাধ্যমে কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে লাইভলিহুডস কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হবে এবং কৃষকদের অধিক চাহিদাসম্পন্ন সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য কারিগরি সহায়তা দেওয়া হবে।