নতুন প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের জীবনযাপনের একটি অংশ জুড়ে রয়েছে অনলাইন। তাদের মানসিক বিকাশের অনেকটাই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়ছে। তাই সন্তানের অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বাবা-মায়ের। এ বিষয়ে বাবা-মা সন্তানদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে পারেন। কারণ, অনলাইন নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাবা-মা ও সন্তান উভয়ের স্বচ্ছন্দ ভূমিকা থাকা জরুরি। সন্তানরা কতক্ষণ অনলাইনে সময় কাটাবে, তা নির্ধারণ করে দেওয়া ভালো। বিশেষ করে অনলাইনে অনেক ভালো ও মজার অ্যাকটিভিটি রয়েছে, যা সন্তানদের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে অনলাইনে খেলা দেখা, গান শোনা, গেম খেলা প্রভৃতি।
সন্তানরা সময় নির্ধারণের বিষয়টি মেনে নিলেও পিতা-মাতাকে ইন্টারনেট ব্যবহারে সময়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে। এছাড়া তারা যেসব কনটেন্ট দেখছে, সেগুলো মজার ও নিরাপদ কি না সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তানকে অনলাইনে নিরাপদ রাখা ও অনলাইনে ইতিবাচক অভিজ্ঞতা নিশ্চিতকরণে শুরু থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে।
অনলাইনে কিশোর-কিশোরীদের নিরাপদ রাখতে ফেসবুকের প্যারেন্ট পোর্টালে টিপস উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য facebook.com/safety/parents/tips ওয়েবসাইটি ভিজিট করতে পারেন। এর কয়েকটি দেখে নিতে পারেন, যেগুলো অনুসরণ করলে সন্তানের অনলাইন অভিজ্ঞতা ইতিবাচক হওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারবেন।
শুরুটা…
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশের আগে সন্তানের সঙ্গে প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করুন। ফলে তারা এ মাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রাইভেসি, সিকিউরিটি প্রটোকল সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পারবে যে, এটি কীভাবে ব্যবহার করলে তারা নিরাপদ থাকবে।
প্যারেন্টাল কন্ট্রোল
শিশুরা কৌতূহলী। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অজানাকে জানতে নতুন উপায় খুঁজে বের করে। তাই আপনার সন্তান যাতে কোনো অ্যাডাল্ট সাইটে ভিজিট না করে বা তাদের অনলাইনে ভুলবশত কোনো অ্যাডাল্ট কনটেন্ট না আসে, সেজন্য মোবাইল, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপের পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড কানেকশনে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ইনস্টল করুন। এর সহায়তায় আপনার সন্তান কতক্ষণ অনলাইনে সময় ব্যয় করবে, তাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
সময় বেঁধে দিন ও ব্যবহারবিধি ঠিক করুন
সময় বেঁধে দিন যে, দিনের কতটুকু সময় সে অনলাইনে থাকতে পারবে। কোন ওয়েবসাইট, অ্যাপ তারা ব্যবহার করতে পারবে। কোন ধরনের কাজ তারা অনলাইনে করতে পারবে, তাও নির্ধারণ করে দিন। অনলাইন গেমিংয়ের সময়, মেসেজিং কিংবা কারও সঙ্গে যোগাযোগের সময় তাদের বাচনভঙ্গি ও আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তা বুঝিয়ে বলুন। আপনার সন্তানকে এটাও জানাতে হবে যে, কলেজ কর্তৃপক্ষ বা চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল যাচাই করে ও অনলাইন কনটেন্ট রিমুভ করা কঠিন। তাকে বুঝিয়ে বলুন, অনলাইনে সে যেন এমন কোনো আচরণ না করেÑযা সে সামনাসামনি কখনও করবে না।
ইতিবাচক ও বাস্তবধর্মী হতে শিখুন
পড়াশোনা বা যে কোনো বিষয় শিখতে ইন্টারনেট সহায়ক ভূমিকা রাখে। আপনার সন্তান কোন ওয়েবসাইট পছন্দ করে, তা আপনাকে দেখাতে উৎসাহিত করুন, জানতে চান তারা এখান থেকে কী শিখছে। কখনও কখনও সন্তানরা যদি ভুলবশত কোনো অনাকাক্সিক্ষত কনটেন্ট দেখে ফেলে, তাহলে তা নিয়ে রাগারাগি বা তাকে অপমান না করে বুঝিয়ে বলুন, যাতে সে আপনার সামনে সেগুলো নিয়ে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ্যবোধ করে।
গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত চিহ্নিত করে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিন
সঠিক সময়ে আপনার সন্তানকে উপদেশ দিন ও নিয়মগুলো জানিয়ে দিন। আপনার সন্তানকে প্রথম মোবাইল ফোন দেওয়ার দিনটিই নিয়মগুলো ঠিক করে দেওয়ার সঠিক সময়। বাবা-মা হিসেবে সন্তান যেখানেই থাকুক, তাদের রক্ষা করা আপনার দায়িত্ব। যখন আপনার সন্তান ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার শুরু করবে, তখন তার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকুন ও অনলাইনে তার উপস্থিতির ওপর লক্ষ রাখুন।
আদর্শ মডেল হতে চেষ্টা করুন
সন্তানকে যা শেখাতে চাচ্ছেন কিংবা মেনে চলতে যে হিতোপদেশ দেবেন, তা আগে নিজেকে মেনে চলতে হবে। যেমন, রাত ১০টার পর কোনো মেসেজ পাঠাতে পারবে না। খাওয়ার টেবিলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। এ বিষয়গুলো আগে নিজেকে মেনে চলতে হবে। তাকে এটিও বোঝাতে হবে যে, সব নিয়ম বড় ও ছোটদের বেলায় সমান বা এক নয়।