নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল টাওয়ার থেকে বিকিরণের মাত্রা জরিপ করে মানব দেহ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে’ টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। গতকাল হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘টাওয়ার রেডিয়েশনের মানদণ্ড ও সাম্প্রতিক জরিপ’ শীর্ষক এক আলোচনায় এ তথ্য জানানো হয়।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মো. আমিনুল হাসান বলেন, ‘টাওয়ার রেডিয়েশন আন্তর্জাতিক ও বিটিআরসির বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের অনেক নিচে আছে, তাই এ নিয়ে আতংকিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
এর আগে ঘরবাড়ির ছাদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, উপাসনালয়, জেলখানা, পতœতাত্ত্বিক স্থাপনা ও স্থানসহ ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মোবাইল টাওয়ারের নিঃসৃত বিকিরণ জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ক্ষতি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গত বছরের ২৫ এপ্রিল সমীক্ষা করতে বলেছিলেন উচ্চ আদালত। এক রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে উচ্চ আদালত বেঞ্চ বিটিআরসিকে চার মাসের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের পাশাপাশি মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় তার থেকে কী পরিমাণ বিকিরণ শরীর গ্রহণ করছে (স্পেসিফিক অ্যাবসরপশন রেট বা এসএআর মান), তা নির্ণয় করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
দেশের অনেক স্থানে মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন জরিপ করা হয়েছে ও তা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে বিটিআরসির কমিশনার আমিনুল হাসান আরও বলেন, ‘টাওয়ার রেডিয়েশনের ফল অত্যন্ত সন্তোষজনক পাওয়া গেছে, যা আমরা নিয়মিতভাবে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। আপনি যদি ভবিষ্যতে আরও উন্নততর সেবা পেতে চান, তাহলে আরও বেশি মোবাইল সাইট স্থাপনের বিকল্প নেই। টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে নানা রকম বিভ্রান্তি আছে, যা ভিত্তিহীন। আমরা সরকারি, বেসরকারি সংস্থা বা ভবন মালিকদের কাছে নিশ্চিত করছি যে, আপনারা ভয় পাবেন না।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের উপপরিচালক শামসুজ্জোহা বলেন, ‘রেডিয়েশন দুই প্রকার আয়োনাইজিং ও নন-আয়োনাইজিং। এর মধ্যে আয়োনাইজিং রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, যেমন পারমাণবিক বর্জ্য, সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রে, গামা-রে কিংবা এক্স-রে। এগুলো শরীরের মধ্যে ডিএনএ পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। অন্যদিকে মোবাইল রেডিয়েশন নন-আয়োনাইজিং, এর শক্তি খুব কম; ফলে এর কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। মোবাইল টাওয়ারে ব্যবহƒত যন্ত্রপাতির ইএমএফ রেডিয়েশন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড আছে। আমরা জরিপে পেয়েছি যে, দেশের মোবাইল টাওয়ারগুলোর রেডিয়েশন নির্ধারিত সীমার অনেক নিচে আছে। আমরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সুন্দরবন, ফেনী, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও জামালপুরের অনেক এলাকায় জরিপ চালিয়েছি। এ পর্যন্ত কোথাও নির্ধারিত সীমার বেশি রেডিয়েশন পাইনি।’
ড. শামসুজ্জোহা বলেন, ‘সুপরিকল্পিত যথেষ্টসংখ্যক টাওয়ার থাকলে তা কম ক্ষমতার রেডিয়েশন ছড়াবে এবং তা তত বেশি নিরাপদ। আমরা আশা করি, এই টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জনমনে যে বিভ্রান্তি আছেÑতা দূর হবে। জরিপ করতে গিয়ে কয়েকটি টাওয়ারের ওপরে পাখির বাসা দেখেছি। পাখিরা দীর্ঘদিন ধরে সেখানে আছে এবং বংশ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। অনেক ভবনের ছাদে টাওয়ারের পাশাপাশি বাগান করা হয়েছে এবং তাতে খুব ভালো সবজির ফলন হচ্ছে।’
বুয়েটের অধ্যাপক সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, ‘বিটিআরসি সারা দেশে মোবাইল টাওয়ার রেডিয়েশন নিয়ে জরিপ করছে। দেশে রেডিয়েশনের লেভেল আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনেক নিচে আছে, এটা খুবই সন্তোষজনক ব্যাপার। টাওয়ার নিয়ে যে বিভ্রান্তি আছে, তা দূর হওয়া দরকার। কারণ, আমাদের প্রযুক্তি নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
অ্যামটব মহাসচিব এসএম ফরহাদ বলেন, ‘সামনে যখন ফাইভ-জি আসবে, তখন আমাদের অনেক বেশি সাইটের প্রয়োজন হবে। তাই শুধু শুধু আতংকিত হয়ে প্রযুক্তিকে রুদ্ধ করার কোনো যুক্তি নেই। তাহলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, শুধু অনুমানের ভিত্তিতে ছড়ানো হচ্ছে যে, মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশন মানুষ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এটি একেবারেই সত্য নয়। এখানে পক্ষ-বিপক্ষের কথা নেই। যারা বক্তব্য দিচ্ছেন, কোন প্রমাণের ভিত্তিতে এসব কথা বলেছেনÑতার সঠিক জবাব তারা দিতে পারবেন না। তারা ভুল ধারণার ওপর আছেন।’
অ্যামটব মহাসচিব এসএম ফরহাদের সঞ্চালনায় বিটিআরসির উদ্যোগে ওই আলোচনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম শহিদুল আলম, হুয়াওয়ে টেকনোলজিসের (বাংলাদেশ) মার্কেটিং বিভাগের পরিচালক এসএম নাজমুল হাসান ও মোবাইল ফোন-শিল্প খাতের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।