নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রাহকসংখ্যায় দেশের তৃতীয় বৃহৎ মোবাইল ফোন অপারেটর বাংলালিংক তার আইকন গ্রাহকদের নানামুখী অফার দিয়ে থাকে প্রায়ই। তবে রকমারি এসব অফারের সুবিধা পান না গ্রাহকরা। অন্যদিকে বাংলালিংক আইকন গ্রাহকদের জন্য আগে ম্যানেজার নিয়োগ থাকলেও এখন নেই। ম্যানেজারের পরিবর্তে কাস্টমার কেয়ার দিলেও সেবার মান আগের মতো নেই। ফলে কোনো অভিযোগ করলেও তার প্রতিকার পান না বাংলালিংক আইকন গ্রাহকরা।
তথ্যমতে, আইকন গ্রাহকদের বিভিন্ন অফার দিতে গত বছর স্বপ্ন, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও বিভিন্ন হোটেলসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলালিংক। এতে গ্রাহককে প্রায় ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট অফার দেওয়া হয়। তবে রকমারি এসব অফার থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় তা গ্রহণ করতে পারেননি গ্রাহক। এতে অনেক সময় বাকবিতণ্ডারও সৃষ্টি হয় গ্রাহকের সঙ্গে। আবার এভাবে অফার দিলেও প্রকৃতভাবে গ্রাহক এসব অফার পাচ্ছেন না, যাকে এক ধরনের প্রতারণা বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েকজন বাংলালিংক আইকন গ্রাহকের সঙ্গে কথা হলে জানা গেছে, বাংলালিংক আইকন গ্রাহকদের রকমারি অফার দেওয়া হলেও ওইসব প্রতিষ্ঠানের পণ্য ক্রয়ে বাড়তি সুবিধা বা ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় না। অন্যদিকে গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ইনভ্যালিড হলেও তা গ্রাহককে মেসেজ বা কল করে জানানো হয় না। অথচ আগে আইকন গ্রাহকদের জন্য ওয়াট টু ওয়ান ম্যানেজার নিয়োগ ছিল। এখন সেটি নেই। সেবার মানও ধরে রাখতে পারছে না বাংলালিংক।
রাজধানীর ধানমন্ডির ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম (ছদ্মনাম)। বাংলালিংকের দীর্ঘদিনের আইকন গ্রাহক তিনি। কথা হলে শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে যাওয়া হয়। সম্প্রতি হোটেল ওয়েস্টিনে আইকন গ্রাহকদের জন্য ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ছিল। নেটওয়ার্ক না থাকায় কনফারমেশন মেসেজ দেখা যাচ্ছিল না; ফলে অফারটি গ্রহণ করতে পারিনি। এ ব্যর্থতার দায় কার?’
একই ধরনের অভিযোগ করেন আরেক ভুক্তভোগী আইকন গ্রাহক সাইফ মাহমুদ (ছদ্মনাম)। তিনি জানান, সম্প্রতি স্বপ্ন সুপার শপে কেনাকাটায় ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট অফার দেওয়া হয়। কেনাকাটা শেষ করে বিল প্রদানের সময় আইকন ডিসকাউন্ট নিতে চাইলে স্বপ্ন থেকে জানানো হয়, আইকন অ্যাকাউন্টটি ইনভ্যালিড। অথচ বাংলালিংক থেকে অফারের কথা বলা হলেও অ্যাকাউন্ট ইনভ্যালিড বিষয়ে বাংলালিংক থেকে অবগত করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছিল।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহিউদ্দিন আহম্মেদ শেয়ার বিজকে বলে, ‘আমাদের কাছে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত নানা রকম অভিযোগ আসছে। অপারেটরগুলো তাদের মুনাফা বাড়াতে একেক সময় রকমারি অফার দিলেও কোনো না কোনো কারণে অনেক গ্রাহকই এসব অফার গ্রহণ করতে পারেন না। এটি এক ধরনের সূক্ষ্ম প্রতারণা।’
বিষয়টি নিয়ে বাংলালিংকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এক ম্যাসেজে শেয়ার বিজকে জানায়, ‘বাংলালিংক একটি গ্রাহকবান্ধব কোম্পানি। বাংলালিংক গ্রাহকের সব অভিযোগই খুবই গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে সমাধান করে থাকে। আইকন গ্রাহকদের নিয়ে বাংলালিংক এ ধরনের অভিযোগ আগে কখনও পায়নি। তারপরও আমরা যদি কোনো অভিযোগ পেয়ে থাকি, অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সমাধানের চেষ্টা করব।’
ম্যাসেজে আরও জানানো হয়, ‘বাংলালিংক গ্রাহকের মধ্যে একটি বিশেষ অংশের কাছে ‘আইকন’ অত্যন্ত পছন্দের একটি প্রোডাক্ট। বিভিন্ন বান্ডেল অফার ও বাড়তি সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে আমরা তাদের ডিজিটাল জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ করার চেষ্টা করে আসছি। তাদের জন্য গ্রাহকসেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যেও আমরা কয়েক বছরে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এমনই একটি পদক্ষেপ হিসেবে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে আইকন গ্রাহকদের জন্য ওয়ান-স্টপ কলসেন্টার ০১৯২০০০০০০০ চালু করা হয়। এর মাধ্যমে আইকন গ্রাহক একটি নম্বরে কল করেই সব ধরনের গ্রাহকসেবার সুযোগ পাচ্ছেন। তাছাড়া আইকন গ্রাহক আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকেও সেবা পেতে পারেন।’
যদিও উল্লিখিত নম্বরে কল করে আইকন সেবা নিয়ে ভোগান্তির কোনো প্রতিকার পাননি বলে জানান বেশ কয়েকজন আইকন গ্রাহক।