আরভিনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক: দুই দলেরই একশতম আন্তর্জাতিক ম্যাচ। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই না হলে চলে? গতকাল মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ের মধ্যে ঠিক তেমনটাই দেখা গেছে। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ধাক্কা খেলেও ঠিকই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনের সেঞ্চুরিতে কক্ষপথে ফেরে সফরকারীরা। তবে অন্যদিকে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দিন শেষে টাইগাদের কিছুটা হলেও এগিয়ে রেখেছেন স্পিনার নাঈম হাসান।  

মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের উইকেটে এবার রাখা হয়েছে ঘাস। স্বাভাবিকভাবেই গতকাল সকালে পেসাররা পান বাড়তি সুবিধা, যা কাজে লাগিয়ে আবু জায়েদ শুরুতেই এনে দেন উইকেট। পরে অবশ্য ক্রেইগ আরভিন ও প্রিন্স মাসভাউরের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দারুণ খেলতে থাকে সফরকারীরা। শেষ পর্যন্ত মাসভাউরকে ফিরিয়ে উইকেট উল্লাসের শুরুটা করেন নাঈম হাসান। পরে এ ডানহাতি স্পিনার সাজঘরের পথ দেখান ব্রেন্ডন টেইলর ও সিকান্দার রাজাকেও। তবে একপ্রান্তে আগলে ছিলেন আরভিন। শেষ পর্যন্ত এ বাঁহাতি তুলে নেন সেঞ্চুরি। তবে দিন শেষ হওয়ার এক ওভার আগে ঠিকই নাঈম তাকে ফিরিয়ে দিয়ে টাইগার শিবিরে এনে দিয়েছেন স্বস্তি। তার আগে জিম্বাবুয়ে তোলে ৬ উইকেটে ২২৮ রান। ক্রিজে রয়েছেন রেজিস চাকাভা ও ডোনাল্ড টিরিপানো। বল হাতে ৬৮ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন নাঈম। পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী ২ উইকেট নিয়েছেন ৫১ রানে।

গতকাল টস হেরে বোলিংয়ে নেমে বোলিংয়ের শুরুটা দারুণ হয়েছিল বাংলাদেশের। ইনিংসের একবারে শুরুতে আবু জায়েদ ফিরিয়ে দেন সফরকারী ওপেনার কেভিন কাসুজাকে। জায়েদের অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল সুইংয়ের জন্য ঠিকমতো খেলতে পারেননি ডানহাতি ওপেনার। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে আসা ক্যাচ মুঠোয় জমান নাঈম। এরপর অবশ্য মাসভাউরে-আরভিন জুটি প্রতিরোধ গড়েন। এরই মধ্যে মাসভাউরে ১০৪ বলে আট বাউন্ডারিতে ছুঁয়েছেন পঞ্চাশ। আবু জায়েদ চৌধুরীকে আরেকটি বাউন্ডারিতে ছাড়িয়ে গেছেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করা আগের সেরা ৫৫ রানকেও। একপর্যায়ে মাসভাউরে ও আরভিন জুটিকে বিচ্ছন্ন করার দারুণ কয়েকটি সুযোগ এসেছিল। কিন্তু সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন লিটন কুমার দাস ও সাইফ হাসান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য লাঞ্চের পরপরই মাসভাউরেকে নিজের বলে ক্যাচ ধরে ফেরান নাঈম। ৫৮ ও ৫৯ রানে নাঈমের বলেই ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়া মাসভাউরে ফেরেন ৬৪ রানে। ১৫২ বলের ইনিংসে ছিল ৯টি চার।

মাসভাউরে ফিরলেও বাংলাদেশের জন্য বিপদের কারণ হয়ে ছিলেন আরভিন। এ বাঁহাতি একপর্যায়ে ১১৭ বলে ৮ চারে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। ঠিক সে সময় অবশ্য নাঈম আরেকটি ধাক্কা দেন জিম্বাবুয়ে শিবিরে। এবার এ ডানহাতির বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন অভিজ্ঞ ব্র্যান্ডন টেইলর। এর পরপরই আরভিনকে ফেরানোর সুযোগ নষ্ট করে বাংলাদেশ। সে সময় নাঈমের

বলে সুইপ করতে চেয়েছিলেন আরভিন। ব্যাটে খেলতে পারেননি, একটুর জন্য বল লাগেনি লেগ স্টাম্পে। বল আঘাত হানে উইকেট-রক্ষকের। লিটন দাস গ্লাভসে জমাতে পারলে স্টাম্পড করার একটা সুযোগ পেতে পারতেন।

লাঞ্চের পর গতকাল ব্যাট করা অনেকটাই সহজ হয়ে যায় জিম্বাবুয়ের জন্য। সে সুযোগে আরভিন আর রাজা খেলছিলেন আস্থার সঙ্গে। তবে লাঞ্চ শেষে ফিরেই আবার চমক দেখান সেই নাঈম। এবার তার রাউন্ড দ্য উইকেটে করা ডেলিভারি টার্ন করবে ভেবে খেলেছিলেন রাজা, কিন্তু তা না হয়ে বেরিয়ে যায় সোজা হয়ে। রাজার ব্যাটের কানায় লেগে বল জমা পড়ে কিপার লিটনের গ্লাভসে। তার আগে ৬২ বলে ১৮ রান করেন রাজা।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু থেকে দারুণ বোলিং করা আবু জায়েদ ফের শিকার ধরে। এবার তিনি ফিরিয়ে দেন টাইমাইসেন মারুমা। আবু জায়েদের দারুণ ইনসুইঙ্গারের জবাব জানা ছিল না এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের।

সতীর্থরা দ্রুত ফিরলেও ঠিকই ২১৩ বলে ১৩ চারে ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নেন আরভিন। তবে এ বাঁহাতিকে গতকাল আর ইনিংস বড় করতে দেননি নাঈম। দ্বিতীয় নতুন বল হাতে নিয়ে এডান হাতি অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন আরভিনকে ফিরিয়ে। নাঈম বলে যতটা টার্ন আশা করেছিলেন, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ততটা করেননি। লেগ-মিডল স্টাম্পে পড়া বলটি পেছনে পায়ে লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে। ২২৭ বলে ১৩ চারে ১০৭ রান করে ফেরেন জিম্বাবুয়ের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। নাঈম পান চতুর্থ উইকেট। তাই দিন শেষে বেশ স্বস্তিতেই রয়েছে বাংলাদেশ। আজ মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই সফরকারীদের গুটিয়ে দিতে চায় টিম টাইগার্স।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২২৮/৬ (মাসভাউরে ৬৪, কাসুজা ২, আরভিন ১০৭, টেইলর ১০, রাজা ১৮, মারুমা ৭, চাকাভা ৯*, টিরিপানো ০*; ইবাদত ১৭-৮-২৬-০, আবু জায়েদ ১৬-৪-৫১-২, নাঈম ৩৬-৭-৬৮-৪, তাইজুল ২১-১-৭৫-০)।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০