মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী

চালু হতে না হতেই প্লট বরাদ্দ বাতিল হচ্ছে ১৪ উদ্যোক্তার

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম: প্লট বরাদ্দের মধ্য দিয়ে প্রকল্প গ্রহণের প্রায় ১০ বছর পর চালু হয়েছে চট্টগ্রামের মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী। তবে শিল্পনগরীটি চালুর শুরুতেই ছোটখাট ধাক্কা খেলো বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক)। চালু হতে না হতেই কিস্তির অর্থ পরিশোধ না করায় ১৪ শিল্পোদ্যোক্তার প্লট বরাদ্দ বাতিল করতে যাচ্ছে বিসিক চট্টগ্রাম। আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় ওই উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হতে পারে। এছাড়াও শিল্পনগরীটিতে এখনও ছয়টি প্লট খালি রয়েছে। বাতিল করা এবং খালি থাকা প্লট বরাদ্দের জন্য আবারও বিজ্ঞপ্তি দেবে বিসিক চট্টগ্রাম। পুরোপুরি চালু হলে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরীতে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।

বিসিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই পৌরসভা সদর এলাকায় ফায়ার ব্রিগেডের সামনে ২০১১ সালের ২০ জুলাই হুকুমদখলের মাধ্যমে শিল্পনগরীর জন্য জমির মালিকানা পায় বিসিক। ১৫ দশমিক ৩২ একর জমিতে ২৬ কোটি ২৭ হাজার টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মিরসরাই বিসিক শিল্পনগরী। এতে বরাদ্দযোগ্য মোট জমির পরিমাণ হচ্ছে ১০ দশমিক ৩৭ একর। এর মধ্যে বিসিকের অফিস ও অন্যান্য কাজে শূন্য দশমিক ৭৪ একর এবং রাস্তা ও ড্রেনের জন্য চার দশমিক ২১ একর জমি ব্যবহƒত হয়েছে। শিল্পনগরীটির বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। তবে নানা জটিলতার কারণে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। এ শিল্পনগরে মোট ৮৮টি প্লট রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিটি ছয় হাজার বর্গফুটের ২৭টি ‘এ’ টাইপের, প্রতিটি চার হাজার ৫০০ বর্গফুটের ৩৩টি ‘বি’ এবং ২৮টি ‘সি’ টাইপের (পরিবর্তনশীল) প্লট রয়েছে।

মোট ৮৮ প্লটের মধ্যে গত ১১ নভেম্বর ৮২ শিল্পোদ্যোক্তাকে ৮২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৌশল খাতে ১৯, খাদ্য ও খাদ্যজাত ১৯, রেডিমেড গার্মেন্ট ১৬, সিরামিকস ও নন-মেটালিক তিন, কেমিক্যাল অ্যান্ড অ্যালাইড ১০, রাবার-লেদার অ্যান্ড অ্যালাইড চার, প্যাকেজিং আট এবং বন ও বনজাত খাতে তিনটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রতিটি প্লটের প্রতি বর্গফুট জমির মূল্য ধরা হয়েছে ৮০০ টাকা করে। এতে প্রতি একর জমির মূল্য পড়বে তিন কোটি ৪৮ হাজার ৪৮ লাখ টাকা। প্লটগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলো ৯ কিস্তিতে পাঁচ বছরের মধ্যে প্লটগুলোর অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন। তবে চাইলে কোনো প্রতিষ্ঠান এককালীনও নগদে প্লটের সম্পূর্ণ ইজারামূল্য পরিশোধ করতে পারবে।

জানা যায়, প্লট বরাদ্দ দেওয়ার প্রায় চার মাস পার হলেও এখনও কিস্তি পরিশোধ করেননি ১৩-১৪ শিল্পোদ্যোক্তা। জানতে চাইলে বিসিক চট্টগ্রাম জেলার উপমহাব্যবস্থাপক আহমেদ জামাল নাসের চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘১৩-১৪ উদ্যোক্তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্লট বরাদ্দের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য ভূমি বরাদ্দ কমিটির সভায় তাদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হবে।’

তিনি জানান, এরই মধ্যে মিরসরাই শিল্পনগরীতে প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ সড়ক, ড্রেন, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক সংযোগসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কয়েকজন উদ্যোক্তা প্লটের সীমানা দেয়ালও নির্মাণ করেছেন। ভবনের লে-আউট প্ল্যান অনুমোদন হলে উদ্যোক্তারা কাজ শুরু করতে পারবেন। এ শিল্পনগরীতে টেক্সটাইল, বন ও বনজ, খাদ্য ও খাদ্যজাত, কেমিক্যাল, ওষুধ, প্যাকেজিং ও গার্মেন্ট পণ্য উৎপাদিত হবে। প্লট বরাদ্দের পর দুবছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎপাদনে যেতে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

শিল্পনগরীটি চালু করতে এত বছর সময় লাগল কেন এমন প্রশ্নের জবাবে আহমেদ জামাল নাসের চৌধুরী বলেন, ‘প্লট বরাদ্দ দেওয়া, প্রতিকূল পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে শিল্পনগরীটি চালু করতে দেরি হয়েছে।’

১৩-১৪ উদ্যোক্তার প্লট বরাদ্দ বাতিল হলে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। খালি ছয়টি প্লটসহ বরাদ্দ বাতিল করা প্লটগুলোর জন্য আবারও আবেদন আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে চারটি বিসিক শিল্পনগরী রয়েছে। এগুলো হলো: কালুরঘাট, ফৌজদারহাট, পটিয়া ও ষোলশহর বিসিক শিল্পনগরী। এগুলোয় মোট ৬২৬টি প্লট রয়েছে। শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ২৯৮। এগুলোর মধ্যে ৮৬টি রফতানিমুখী শিল্প রয়েছে। চট্টগ্রামের বিসিক শিল্পনগরীগুলোয় ২২ হাজার ৮৭০ পুরুষ ও ৪৪ হাজার ১৬৬ নারী কর্মী কর্মরত আছেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০