ক্রীড়া প্রতিবেদক : সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা ভালো নয় মাশরাফি বিন মুর্তজার। শেষ ১০ ওয়ানডেতে এ ডানহাতি নিয়েছেন মাত্র একটি উইকেট। এর মধ্যে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছেন সেই ২০১৯ বিশ্বকাপের পর। নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে নিয়মিত। সামলাতে হচ্ছে কঠিন সব প্রশ্ন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে গতকাল সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে মাঠের পারফরম্যান্সের সঙ্গে মাশরাফির আত্মসম্মানবোধ মিলিয়ে প্রশ্ন ওঠে। মূলত এরপরই মেজাজ হারিয়ে ফেলেন ম্যাশ। এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দেন: আত্মসম্মান বা লজ্জার কথা বলছেন! আমি কি চুরি করি মাঠে? আমি কি চোর? আমার সমালোচনা আপনারা, সমর্থকরা করবেন। কিন্তু লজ্জা পেতে হবে কেন?
গত বছর বিশ্বকাপে বল হাতে মাশরাফি ছিলেন ভীষণ বিবর্ণ। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আসে সে কথা। এর মধ্যেই একজন সংবাদকর্মী প্রশ্ন করে বসেন: ‘পারফর্ম করাটা আত্মসম্মানের ব্যাপার…’। ঠিক তখনই মাশরাফি জবাব দেন কড়া ভাষায়, ‘আত্মসম্মান বা লজ্জা কেন, আমি কি চুরি করি মাঠে? আমি কি চোর? খেলার সঙ্গে লজ্জা, আত্মসম্মানÑএসব আমি মেলাতে পারি না। এত জায়গায় চুরি-চামারি হচ্ছে, তাদের লজ্জা নেই! আমি মাঠে এসে উইকেট না পেলে লজ্জা লাগবে কেন? আমি কি চোর? আমি কি বাংলাদেশের হয়ে খেলছি, নাকি অন্য কোনো দেশের হয়ে যে লজ্জা পেতে হবে! আমি পারিনি, আমাকে বাদ দিয়ে দেবে। ব্যাপারটি সিম্পল। কিন্তু লজ্জা-আত্মসম্মানবোধ আমি কার সঙ্গে দেখাতে যাব? আমি তো বাংলাদেশের হয়ে খেলছি। আমি কি বাংলাদেশের মানুষের বিপক্ষের মানুষ? কেউ পারফর্ম না করতেই পারে। তার যদি নিবেদন না থাকে, শৃঙ্খলা না থাকে, সেসব নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে।’
মাঠের ক্রিকেটে ভালো সময়, মন্দ সময় আসবেই। এসব নিয়ে প্রশ্ন, সমালোচনাকে স্বাগত জানাতে কোনো সমস্যা নেই মাশরাফির। কিন্তু এখানে আত্মসম্মানকে টেনে আনাটা মানতে পারছেন না তিনি। তাইতো গতকাল ব্যাপারটি খুব ভালোভাবে সবাইকে সংবাদ সম্মেলনে বুঝিয়েছেন মাশরাফি, ‘উইকেট নাও পেতে পারি। আমার সমালোচনা আপনারা, সমর্থকরা করবেন। কিন্তু লজ্জা পেতে হবে কেন? উইকেট না পেলে সমালোচনা হবেই। কথা যখন আসে লজ্জা-আত্মসম্মানের, তখন আমারও প্রশ্ন থাকে। কিন্তু ক্রিকেট খেলতে এসে আমি কি আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে এসেছি? আমি কি অন্য দেশের হয়ে খেলছি, নাকি চুরি-চামারি করছি?’
দেশের জার্সিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ২১৭ ওয়ানডে খেলেছেন মাশরাফি। অধিনায়ক হিসেবেও সবচেয়ে বেশি ৮৫ ম্যাচ খেলেছেন। এদিকে আবার নেতৃত্ব দিয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৭ ম্যাচ জিতিয়েছেন। সব মিলিয়ে একজন সফল ক্রিকেটার মাশরাফি। তাই ক্যারিয়ারের শেষ লগ্নে এসে নিজেকে আবারও নতুন করে প্রমাণের কিছু দেখছেন না তিনি। ব্যাপারটি নিজেই নিশ্চিত করেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস, ‘কোনো কিছু প্রমাণ করার জন্য আমি কখনও ক্রিকেট খেলিনি। নিজের চেষ্টায় ক্রিকেট খেলেছি। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় কি প্রশ্ন উঠছে সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করে কোনো লাভ নেই। আপনার মনে কি প্রশ্ন আছে সেটাই আমাকে করুন। আবারও বলছি, আমি কখনও কারও কাছে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য ক্রিকেট খেলিনি। আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলেছি। বাংলাদেশ দলকে জেতানো আমাদের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের দায়িত্ব। সেরাটা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। চেষ্টা করে যাওয়াটা আমাদের দায়িত্ব। সে চেষ্টা যাতে সফল হয় সেটাই আমরা সব সময় করে থাকি।’