পুঁজিবাজারে একটি গ্রুপ বিভিন্নভাবে কারসাজি করে আসছে।এখনও তারা সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের শাস্তি তাদের দেওয়া হয় না। আসলে এদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেই। যারা এখন বিভিন্ন পদে বসে আছেন, তারা শুধু তাদের চেয়ারের নিরাপত্তায় ব্যস্ত থাকেন। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মোশতাক আহমেদ সাদেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আল আমিন ও ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) প্রেসিডেন্ট সাইফ ইসলাম দিলাল।
আল আমিন বলেন, মানি মার্কেট থেকে অর্থ পাচার হয়েই যাচ্ছে। ফলে আমানতকারীরা আতঙ্কে ভুগছেন। আমানতকারীর অর্থ রাখার একমাত্র নিরাপদ জায়গা হচ্ছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এখন এ নিরাপদ জায়গা যদি আমানতকারীর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে কোথায় যাবে তারা? আবার মানি মার্কেটের সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেটের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যদি মানি মার্কেটে এরকম অবস্থা হয়, তাহলে এর প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়বেই এখন সেটা বাজারে দেখা যাচ্ছে।
সম্প্রতি ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে দেশের সাত বছরের অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতি বছরে গড়ে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। ২০১৫ সালে অর্থ পাচার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ওই বছর এক হাজার ১৫১ কোটি ৩০ লাখ ডলার পাচার হয়। গত সাত বছরে পাচার হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার ২৭৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার বা চার লাখ ৪৮ হাজার ২৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। আর এ অর্থ আমদানি বা রপ্তানিতে মিস ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার করা হয়েছে। যারা এ অর্থ পাচার করছে তারা বেশ শক্তিশালী এবং পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে এটি। যারা এটা নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের অনেকেই এটার সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এসব জানা গেছে। কথা হচ্ছে, সরষের মধ্যে ভূত থাকলে এটা তাড়াবে কে। এটা তাড়াতে হলে নৈতিকতা, সদিচ্ছা থাকতে হবে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী যাদের নিয়ে কাজ করেন তাদের যদি সহযোগিতা না পান, সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে একটি চিহ্নিত গ্রুপ বাজারে কারসাজি করছে। এখানে কোনো ভিন্ন গ্রুপ কারসাজির সঙ্গে জড়িত নয়। বিগত বছরে এসব গোষ্ঠীর কোনো বিচার হয়নি বলে এখনও তারা বাজারে এসব কাজ করে যাচ্ছেন। কয়েকজনের কারণে বাজারে এখন এ অবস্থা। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। সময় হয়েছে কারসাজিকারীদের ধরে তারা যে পরিমাণ অর্থ কারসাজি করেছে, তার দ্বিগুণ জরিমানা করে বাজার থেকে বের করে দেওয়া। তাহলে আর এরকম কাজ করতে সাহস পাবে না।
সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, এখন সব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায়। পুঁজিবাজার, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখন নীতি, নৈতিকতার অনেক ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত মানি মার্কেট থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। যেসব কোম্পানির উৎপাদন নেই এবং বন্ধ রয়েছে, সেসব কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েই যাচ্ছে। একটি বিকাশমান অর্থনীতির দেশে যদি সবই প্রধানমন্ত্রীর দেখতে হয়, বিষয়টি আসলে অনেক পরিতাপের বিষয়।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে একটি গ্রুপ বিভিন্নভাবে কারসাজি করে আসছে এবং এখনও তারা সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের শাস্তি তাদের দেওয়া হচ্ছে না। আসলে এদের শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা নেই পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার। যারা এখন চেয়ারে বসে আছেন তারা শুধু তাদের চেয়ারের নিরাপত্তায় ব্যস্ত থাকেন।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ