বণিক বার্তা-সিটি ব্যাংকের আয়োজনে অর্থনৈতিক সম্মেলন

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বণিক বার্তা পত্রিকা ও সিটি ব্যাংকের আয়োজনে অর্থনৈতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর একটি হোটেলে দিনব্যাপী এ আয়োজন দুটি অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হয়। ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি: ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সমাপনী অধিবেশনের শিরোনাম ছিল ‘আর্থিক খাত: ঋণ ও সুদের অর্থনীতি’। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বণিক বার্তা সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সঞ্চয় স্কিমগুলো ছিল এ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। আমরা দেখলাম, যাদের জন্য স্কিমগুলো আরম্ভ করা হলো, তারা সেগুলোর সঙ্গে তেমনভাবে সম্পৃক্ত নন। অন্যদিকে একটা শ্রেণি কোটি কোটি টাকার সঞ্চয় স্কিম কেনা শুরু করল। আমরা তো এসব চাইনি। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকেই সঞ্চয় স্কিমগুলো প্রান্তিক মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিতে চাই। এ জন্য আমরা পুরো ব্যবস্থাপনাটি অটোমেশনের উদ্যোগ নিয়েছি।

পুঁজিবাজার সম্পর্কে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমার কাজ হচ্ছে এ দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করা, শক্তিশালী করা। আমি যদি আমার কাজটা ঠিকমতো করতে পারি, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এর একটা ইতিবাচক প্রভাব পুঁজিবাজারে এসে পড়বে। আমি সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে অনেক পার্থক্য। অর্থনীতির সবগুলো খাতেই আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। এই অগ্রগতিটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে ২০০৯ সালের পর। এর পরের ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি যতদূর এগিয়েছে, তা আগে কখনোই হয়নি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের এ পঞ্চাশ বছরে সন্নিকটে গর্ব করার মতো অনেক অর্জন আমাদের সামনে দৃশ্যমান। খুব গুরুত্ব দিয়ে যদি বলতে চাই মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। যাতে করে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় আমরা বেশ এগিয়ে যেতে পেরেছি। এমনকি আমরা যাদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করেছি, সেই পাকিস্তানের থেকে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতি ঈর্ষণীয়।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালে জিডিপি এশিয়ার সব দেশ থেকে বেশি। এটা আমাদের জন্য ভালো একটা খবর। প্রবাসে শ্রমিক পাঠানোর আগে তাদের দক্ষতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা। আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দক্ষতার অভাব, দুর্নীতি, ভালো লোকদের দায়িত্বশীল পদে না রাখাসহ নানা দুর্বলতা রয়েছে আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। ব্যাংকের সুদের হার ৯ ও ৬-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে দেওয়া যেতে পারত। অর্থাৎ ৯ থেকে ১২-১৩ পর্যন্ত করা যেতে পারত। কিংবা ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত করা করা যেতে পারত। কিন্তু তা ৯ ও ৬-এর মধ্যে বেঁধে দেওয়াটা বাস্তবসম্মত হয়নি। মুক্তবাজার অর্থনীতি এভাবে চলতে পারে না।

ড. হোসেন জিলুর রহমান বলেন, এখনও আমরা সেই তৈরি পোশাক খাত এবং রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করে আছি। এক্ষেত্রে আমাদের প্রবৃদ্ধির নতুন খাত কী হতে পারে, তা নিয়ে ভাবার কথা বলেন তিনি।

‘আর্থিক খাত: ঋণ ও সুদের অর্থনীতি’ শীর্ষক সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আলোচনায় অংশ নেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং লংকাবাংলা ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা শাহরিয়ার। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিডব্লিউসি বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশীদ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০