নেতৃত্বের বিদায়ে অভিমানের সুর মাশরাফির

ক্রীড়া প্রতিবেদক : অনেক দিন ধরেই একটি প্রশ্ন ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজাকে ঘিরে: কবে অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন। কিন্তু উত্তরটা ঠিক তিনি দেননি। আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকেও তেমন কিছু জানানো হয়নি। তবে গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে হুট করে মাশরাফি জানিয়ে দেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতেই হতে যাচ্ছে অধিনায়কত্বের শেষ। সে সময় এ ডানহাতি জানান, আপাতত অবসরে যাচ্ছেন না। যতদিন পারেন, খেলতে চান জাতীয় দলের জার্সিতে।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে গতকাল লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাশরাফি, ‘আগামীকাল (আজ) আমার অধিনায়ক হিসেবে শেষ ম্যাচ। আমার প্রতি দীর্ঘ সময় আস্থা রাখার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে

ন্যবাদ জানাই। ধন্যবাদ জানাই আমার নেতৃত্বে যত খেলোয়াড় খেলেছে বাংলাদেশ দলে, তাদের। শেষ পাঁচ-ছয় বছরের যে সফর ছিল, আমি নিশ্চিত এ প্রক্রিয়াটা এতটা সহজ ছিল না।’

নেতৃত্ব ছাড়লেও দলের জন্য সর্বোচ্চটাই দেওয়ার চেষ্টা করবেন মাশরাফি, ‘খেলোয়াড় হিসেবে অবশ্যই আমি চেষ্টা করব সেরাটা দেওয়ার, যদি সুযোগ আসে আমার এবং শুভকামনা থাকবে আমার পরবর্তী অধিনায়কের জন্য। আমার বিশ্বাস, সে বাংলাদেশ দলকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। যদি আমি দলে থাকি, চেষ্টা করব আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, আমার ভেতরে যতটুকু আছে, ততটুকু দিয়ে সহযোগিতা করার। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।’

বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণার সময় মাশরাফির কণ্ঠে ফুটে ওঠে অভিমানের সুর, ‘একটি মানুষকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অন্তত কিছুটা সময় দেওয়া উচিত। ১৫ বছর ধরে এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অংশ। আমার যত অর্জন বা জীবনে যা কিছু করেছি, সব এ খেলা দিয়ে। আমার জীবনের অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এটি। ফলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে আমার সময় দরকার হতো।’

পারিবারিক কোনো বিষয় নয় বলেই বোর্ডের সঙ্গে নেতৃত্ব ছাড়ার আগে আলোচনায় বসেননি মাশরাফি। এদিকে এ তারকা শুভকামনা জানিয়েছেন পরবর্তী অধিনায়কের জন্য, ‘আমরা মাঠে নামি বাংলাদেশের জন্য। এটা বড় দায়িত্ব। সবার আবেগ জড়িয়ে থাকে। এটি পারিবারিক কোনো ব্যাপার হলে আলোচনার সুযোগ থাকত। শুভকামনা থাকবে পরবর্তী অধিনায়কের জন্য। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ দলকে সে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। আমি যদি দলে থাকি, তবে চেষ্টা করব আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, ভেতরে যতটুকু আছে, তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে।’

এর আগে ২০০৯ সালে প্রথম অধিনায়ক হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলেন মাশরাফি। কিন্তু প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিনেই চোট পেয়ে ছিটকে যান সফর থেকে। ওয়ানডেতে সেবার আর নেতৃত্ব দেওয়া হয়নি। লম্বা বিরতির পর আবার অধিনায়ক হিসেবে ফেরেন ২০১০ সালের ইংল্যান্ড সফরে। সেখানেই রঙিন পোশাকে নেতৃত্বের সূচনা। শুরুর পথচলা ছিল ঝলমলে। দ্বিতীয় ম্যাচেই পান জয়ের স্বাদ, প্রথমবার ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। কিন্তু আবার চোটের থাবা। দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই চোট পেয়ে ছিটকে যান। তবে হাল ছাড়েননি। অনেক কষ্টে আবার জাতীয় দলে ফেরেন। ২০১৪ সালের শেষ দিকে পান নেতৃত্ব। শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়ের।

মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। ওই বছর দেশের মাটিতে সিরিজ জয় ধরা দেয় ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, হোয়াইটওয়াশড হয় পাকিস্তান। চলতে থাকে অধিনায়ক মাশরাফির জয়রথ। আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রত্যাশিত সিরিজ জয় তো ছিলই। এদিকে টি-টোয়েন্টিতে ২০১৬ এশিয়া কাপ ফাইনালে ওঠে দল। ২০১৭

সালে অবশ্য আচমকাই ছেড়ে দেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট।

টি-টোয়েন্টি ছাড়লেও মাশরাফি ওয়ানডেতে ঠিকই বাংলাদেশকে রাখেন কক্ষপথে। তাইতো ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টাইগাররা পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। এরপর দেশে ও বিদেশের মাটিতে বেশ কয়েকটি ওয়ানডে সিরিজ জেতে টিম টাইগার্স। কিন্তু ২০১৯ বিশ্বকাপ থেকেই হঠাৎ ছন্দপতন হয় লাল-সবুজ প্রতিনিধিদের। যে কারণে মাশরাফির সমালোচনা বাড়তেই থাকে। শেষ পর্যন্ত নেতৃত্বই ছেড়ে দিলেন ম্যাশ।

সব মিলিয়ে মাশরাফির নেতৃত্বে এখন পর্যন্ত ৮৭ ম্যাচে ৪৯টিতে জিতেছে টাইগাররা। আজ নিশ্চয়ই শেষ ম্যাচটি জিতেই অধিনায়কত্ব ছাড়াটা স্মরণীয় করে রাখবেন মাশরাফি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০