ক্রীড়া প্রতিবেদক: যার হাত ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নতুন যুগের শুরু, সেই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা গতকাল খেলে ফেললেন শেষ ম্যাচ। স্বাভাবিকভাবেই অধিনায়কের বিদায়ী ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে জ্বলে ওঠেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দুজনে দ্রুত রান তোলার সঙ্গে সঙ্গে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রেকর্ডের বন্যা বইয়ে দেন। আর তাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বৃষ্টিবিঘিœত সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নির্ধারিত ৪৩ ওভারে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ৩ উইকেটে ৩২২ রানের বড় পুঁজি।
টস হেরে গতকাল ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে দারুণ খেলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। একপর্যায়ে তারা দ্রুত রান তোলার দিকে মনোযোগী হন। সে প্রতিযোগিতায় আগে পরে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন-তামিম। এরপর তামিম একটু ধীরে পথ চলেন। তবে লিটন নিজের স্বভাবসুলভ ব্যাটিংই করেন। এ ডানহাতি একপর্যায়ে ১৩ চারে ১১৪ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন। এর কিছুক্ষণ পরই ওপেনিংয়ে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন তামিম-লিটন। এর আগে ১৯৯৯ সালে মেহেরাব হোসেন অপি-শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ ওপেনিংয়ে গড়েছিলেন ১৭০ রানের জুটি। এর কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় বৃষ্টি। তাই আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর ফের মাঠে গড়ায়। তাই খেলার দৈর্ঘ্য ৭ ওভার কমে হয়ে যায় ৪৩ ওভার।
হাফসেঞ্চুরির পর ধীরে খেলা তামিম বৃষ্টির শেষে মাঠে নেমে জিম্বাবুয়ে বোলারদের ওপর ঝড় তোলেন। একপর্যায়ে এ বাঁহাতি ক্যারিয়ারের ১৩তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ৯৮ বলে। এজন্য তিনি হাঁকান চারটি ছয় ও পাঁচটি চার। এর মাঝে ওয়ানডেতে দেশের সেরা জুটির রেকর্ড গড়েন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। ছাড়িয়ে যান সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহর ২২৪ রানের জুটিকে। ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে ওই জুটি গড়েছিলেন তারা।
এদিকে তামিম সেঞ্চুরির পর যেন লিটন দাস ব্যাট হাতে দানবীয় রূপ ধারণ করেন। কোনো বোলারকেই সে সময় তিনি আর বোলারই মনে করছিলেন না। তাই তো প্রতিটি ওভারেই কমবেশি চার-ছয় আদায় করে নিচ্ছিলেন। সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এ ডানহাতি ক্যারিয়ারে প্রথমবার দেড়শ’ রানে পৌঁছান। এর কিছুক্ষণ পরই দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের স্কোরে তামিমকে পেছনে ফেলেন। তামিম গত ম্যাচেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেন ১৫৮ রান, যা ছিল বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। গতকাল সেই রান টপকে যান লিটন। এক সময় এ ডানহাতি দেখাচ্ছিলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবলের স্বপ্ন। ছয়-চার হাঁকিয়ে বেশ এগোচ্ছিলেনও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি তিনি। চার্লটন সুমাকে ওড়ানোর চেষ্টায় সিকান্দার রাজার হাতে ধরা পড়েন লিটন। তার আগে ১৪৩ বলে ১৬ চার ও ৮ ছয়ে ১৭৬ রান করেন তিনি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বোচ্চ। তামিম ইকবালের ৭ ছক্কা ছাড়িয়ে ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮ ছক্কারও নতুন রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
লিটনের বিদায়ে ভাঙে তামিমের সঙ্গে ২৯২ রানের উদ্বোধনী জুটি। ওয়ানডেতে এটা উদ্বোধনী জুটির তৃতীয় সেরা সাফল্য। এ রেকর্ডে সবার আগে রয়েছেন জন ডিলন ক্যাম্পবেল ও শেই হোপ। তারা ২০১৯ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে গড়েছিল ৩৬৫ রানের জুটি। এরপরই রয়েছেন ইমাম-উল-হক ও ফখর জামান। তারা ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গড়েছিলেন ৩০৪ রানের জুটি। গতকাল লিটন আরেকটু ব্যাট করতে পারলেই অনন্ত ইমাম-ফখরের রেকর্ডটা ভাঙত।