নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের অভ্যন্তরে পেমেন্ট সিস্টেম বা অর্থ পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থার পুরো দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া ব্যাংকিং ও এ-সংক্রান্ত কোনো কাজ করতে পারবে না কোনো প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) ও পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) এসব কাজ করছে। এগুলোকে অনুমোদনহীন ও অবৈধ বলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো ধরনের লেনদেন বা হিসাবসেবা না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করল বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ৫ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানকে কোনো সেবা দিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। এমনকি কোনো হিসাবও রাখতে পারবে না। মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিতে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সব ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (এমএফএস), পিএসও এবং পিএসপিকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং, পিএসপি ও পিএসও সেবা দিচ্ছে, তাদের সঙ্গে ব্যাংকগুলো কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবে না।
আগে এমন প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক, কিন্তু অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এটি মেনে চলছে না। এজন্য নতুন করে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে অনুমোদনহীন ২০টির মতো প্রতিষ্ঠান এই কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরাসরি এসব সেবা বন্ধের সুযোগ না থাকায় আপাতত ব্যাংকগুলোকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএম) দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোও কেনাকাটা, বিল পরিশোধ ও লেনদেন সুবিধা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে ১৬টি ব্যাংক এ সেবা দিচ্ছে। এগুলো হলোÑব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশ, ডাচ্-বাংলার রকেট, ইসলামী ব্যাংকের এম ক্যাশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের ইউক্যাশ, সাউথইস্ট ব্যাংকের টেলিক্যাশ, ওয়ান ব্যাংকের ওকে, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের মাই ক্যাশ, প্রাইম ব্যাংকের প্রাইম ক্যাশ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের স্পট ক্যাশ, ট্রাস্ট ব্যাংকের মোবাইল মানি, মেঘনা ব্যাংকের ট্যাপ এন পে। এ ছাড়া রূপালী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, বাংলাদেশ কমার্স, এনসিসি ও যমুনা ব্যাংক দিচ্ছে শিওর ক্যাশ সেবা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে পিএসপি ও পিএসও লাইসেন্স দিয়েছে। আইপে সিস্টেম ও ডি মানি পেয়েছে পিএসপি লাইসেন্স। আর পিএসও লাইসেন্স আছে আইটি কনসালট্যান্ট, এসএসএল কমার্স ও সূর্যমুখী লিমিটেডের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন না নিয়ে এই সেবা দিলে গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য সতর্ক হতে বাংলাদেশ ব্যাংক এমন নির্দেশনা দিল।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়াই কিছু প্রতিষ্ঠান পিএসপি ও পিএসও কার্যক্রম চালাচ্ছে, যা আইনসিদ্ধ নয়। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম কোনো কারণে বন্ধ হলে বা তাদের গ্রাহকেরা প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ-সংক্রান্ত বৈধ কার্যক্রমের ওপর গ্রাহকদের আস্থা নষ্ট হবে। এ ছাড়া অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কৃত্রিম অর্থ সৃষ্টি করে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিসহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন ছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রমে চালাচ্ছে, তাদের জন্য কোনো ব্যাংক কাস্টডিয়ান হিসাব বা ট্রাস্ট কাম সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট সেবা দিতে পারবে না। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খোলা ও লেনদেন পরিচালনা করতে পারবে না। এ ছাড়া অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পেমেন্ট গেটওয়ে বা মার্চেন্ট এগ্রিগেশন সেবা প্রদান করা যাবে না।