আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লড়াইয়ের দিন, প্রত্যয়ের দিন। ১৮৬৪ সালে শ্রমিক শ্রেণির প্রথম আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠনের সময় থেকেই কার্ল মার্কস কার্যক্ষেত্রে নারীর অধিকারের প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন। এ কাজ করতে গিয়ে তাকে অনেক বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে তিনি ছিলেন অনড়। প্রথম আন্তর্জাতিক নীতি অনুযায়ী, ট্রেড ইউনিয়নগুলোয় প্রথম পুরুষের সঙ্গে সঙ্গে নারী শ্রমিকদেরও সদস্য করা হয় এবং তাদের সমান অধিকারের দাবি ঘোষণা করা হয়। এ সময়ের পর থেকেই ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জার্মানি প্রভৃতি দেশে নারী শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হতে থাকেন।

এ ধারা বহন করেই প্যারিস বিপ্লবের সময় শ্রমজীবী নারীরা এক সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেন, যা ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয়। সে সময় প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্যে এগিয়ে এসেছিলেন সর্বস্তরের শ্রমজীবী নারী, এমনকি মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী নারীরাও। এ সময় তারা যে শুধু বিপ্লবের কাজে অংশ নিয়েছিলেন তা নয়, প্রবল বীরত্বের সঙ্গে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

১৯০৭ সালে জার্মানির স্টুটগার্টে প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের মূল কথা ছিল, নারী-পুরুষের সমানাধিকার। ১৯০৮ সালের ৮ মার্চ নিউইয়র্কের দরজি নারী শ্রমিকদের ঐতিহাসিক ভোটাধিকার আন্দোলন শুরু হয়। ১৯০৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কেই শ্রমজীবী নারীদের একটি সভায় নারীর ভোটাধিকার দাবি করে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

১৯১০ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, এরও নেতৃত্বে ছিলেন ক্লারা জেটকিন। এখান থেকে প্রস্তাব গৃহীত হয়, প্রতিবছর একটি দিন পূর্ণবয়স্ক নারীর ভোটাধিকার দাবি দিবস হিসেবে পালন করা হবে।

১৯১১ সালের ১৯ মার্চ জার্মানিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়। তারপর ১৯১৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের শ্রমজীবী নারীরা মার্চ মাসের বিভিন্ন দিনে ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ পালন করতে থাকেন। এই বিভিন্ন পথ বেয়ে ১৯১৪ সাল থেকে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

১৯০৮ সালের ৮ মার্চ দরজি মেয়েরা ভোটাধিকারের জন্য যে আন্দোলন শুরু করেন, সেই দিনের ঐতিহ্য বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে রইল। ৮ মার্চ খ্যাত হলো আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারী অধিকার’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের নারী দিবসে নানা কর্মসূচি পালন করবে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জš§শতবার্ষিকী উপলক্ষে এ বছরের আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশে নারী সমাজের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, নারী অধিকার রক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ও সমতা সৃষ্টির জন্য দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পৃথক বাণীসহ সংবাদপত্রে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছেন। আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে উদ্বোধন অনুষ্ঠান, দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও জাতীয় পর্যায়ে পাঁচজন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে সম্মাননা প্রদান করা হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের লক্ষ্যে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। বাংলাদেশে নারী উন্নয়নে অসামান্য অগ্রগতি, সমতা সৃষ্টি, বৈষম্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ে বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, স্যুভেনির প্রকাশিত ও প্রদর্শিত হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২০ উপলক্ষে আগামী ১৬ থেকে ১৮ মার্চ দেশজুড়ে তিন দিনব্যাপী ‘নারী উন্নয়ন মেলা’ আয়োজন করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০