ক্রীড়া প্রতিবেদক: দৃশ্যপট দেখে মনে হচ্ছে নেতৃত্বের সঙ্গে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজার অধ্যায়ও শেষ। যদিও এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি। জানিয়েছেন খেলতে চান। কিন্তু বাস্তবতা বড় নিষ্ঠুর। এর মধ্যে যে এ পেসারের ফিটনেস ফর্ম নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
গত পরশু অধিনায়ক মাশরাফির গৌরবময় পথচলা শেষ হয়েছে বড় জয়ে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়েকে ১২৩ রানে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। দেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি ওয়ানডেতে করেন জয়ের হাফসেঞ্চুরি। যে কারণে ভালো লাগছে নড়াইল এক্সপেসের, ‘৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতায় খেলোয়াড়দের জন্য ভালো লাগছে। ওদের কাছ থেকে যে সমর্থন পেয়েছি, তা অবিস্মরণীয়। কোচদের কাছ থেকেও পেয়েছি। আশা করি, নতুন অধিনায়ক দলকে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে। সামনে বিশ্বকাপ আছে।’
অধিনায়ক মাশরাফি অবসর নিলেও খেলোয়াড় মাশরাফিকে এখনও অন্তত দুই বছর দেখতে চান ভক্তরা। তবে এ ব্যাপারে নড়াইল এক্সপ্রেস কিছুই বলেননি। শুধু জানিয়েছেন, বোর্ড যদি মনে করে আমাকে দরকার তবে আমি খেলব। মূলত এরপর থেকেই ম্যাশের অবসরের শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে ভক্তদের।
টাইগারদের শেষ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে জেতানোর পর গত পরশু মাশরাফি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করাই একটা চাপ। আমি যখন একজন খেলোয়াড় হিসেবে থাকব, আমাকে নিয়ে অনেক ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হবে। আমি মনে করি, আমার জন্য ভালো হয়েছে। সুযোগ পাওয়া না-পাওয়া পরের ব্যাপার। তবে আমার খেলার জন্য অনেক সুবিধাই হবে আমি মনে করি।’
এদিকে অধিনায়ক মাশরাফি বিদায় বেলায় পেয়েছেন সতীর্থদের শুভেচ্ছা। তামিম ইকবাল যেমনটি বলেছেন, ‘মাশরাফি ভাই অবিশ্বাস্য একজন ক্রিকেটার। যখন তিনি ২০১৪ সালে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব নিলেন তখন আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বলতে গেলে কোথাও তেমন ছিলাম না। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালে সেই তিনি আমাদের বিশ্বমঞ্চের সর্বত্র পৌঁছে দিলেন। এমনও সময় এসেছিল যখন লোকে আমাকে দল থেকে বাদ দিতে বলত, আর ঠিক তখনই তিনি সবসময় সমর্থন দিয়ে গেছেন আমাকে।’
মাশরাফিকে নিয়ে লিটন দাস গত পরশু বলেন, ‘আমার হƒদয়ে তার জন্য বিশেষ একটা জায়গা থাকবে। তার নেতৃত্বেই আমার অভিষেক হয়েছিল। সবসময় আমাকে তিনি সমর্থন দিয়ে গেছেন। তার মতো অধিনায়ক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা তাকে মিস করব। তার নেতৃত্বে আমরা দলের মধ্যে সিনিয়র এবং জুনিয়রদের কোনো পার্থক্য খুঁজে পেতাম না। দারুণ এক মজার মানুষ তিনি।’
ওয়ানডেতে এখন পর্যন্ত ২২০ ম্যাচে মাশরাফি নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৭০ উইকেট। তার সেরা বোলিং ফিগার ২৬ রানে ৬ উইকেট। কিন্তু গত বিশ্বকাপের আগ থেকেই এ পেসার নিজের ছন্দ হারিয়ে বসেন। তবে অধিনায়কত্বের শেষ ম্যাচে গত পরশু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটা সময় পুরোনো মাশরাফিকে দেখা যায় বল হাতে। তবে ম্যাচ শেষে তার বোলিং বিশ্লেষণ (৬ ওভারে ৪৭ রানে ১ উইকেট) সে পরিচয় বহন করবে না।
বল হাতে লম্বা সময় খারাপ যাওয়ায় অনেকেই মাশরাফিকে বাদ পড়াদের কাতারে ফেলে দিয়েছেন। তবে এখনই তেমনটা ভাবছেন না নড়াইল এক্সপ্রেস। এ পেসারের আশা আছে, যখনই ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন, সেটা হবে মাঠ থেকেই, ‘আশা আছে। এটা তো সবাই চিন্তা করে। আমি আপনাদের সামনে আগেও বলেছি, এটা আমার এত বেশি চিন্তার জায়গা নয়। অনেকেই বলে, মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারাটা অনেক বড় ব্যাপার। আমি বলি, কী হবে এভাবে বিদায় নিয়ে। বিদায় তো বিদায়ই, ঘরে বসে নেন আর মাঠ থেকেই নেন।’
মাশরাফি কবে অবসর নেবেন, তা হয়তো মাশরাফি ছাড়া আর কেউ বলতে পারবেন না। কেননা সদ্যই সাবেক হওয়া ওয়ানডে অধিনায়ক যা করেন খুব বেশি চিন্তা না করেই। এমন দৃষ্টান্ত তিনি দেখিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের সময়। কাউকে কিছু না বলেই হুট করেই টসের সময় শ্রীলঙ্কার মাটিতে জানিয়ে দেন, টি-টোয়েন্টি ছাড়বেন। এদিকে আবার গত বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পড়ে শোনান, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচটিতেই আমি বাংলাদেশকে শেষবারের মতো নেতৃত্ব দেব। কোনো একদিন হয়তো ম্যাচ শেষেই আচমকা এ তারকা পেসার ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দিয়ে বসবেন। আসলে মাশরাফি তো এমনই।