শে ক ড়  ক থ ন: চৈত্তগৌং, চাটিগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম

নামকরণের পেছনে রয়েছে লোকমুখে প্রচলিত নানা মিথ, রহস্য। এ পর্বে ‘চট্টগ্রাম’ জেলার লোককথা গদ্যে সাজিয়েছেন শরিফুল ইসলাম পলাশ

চট্টগ্রাম আমাদের বাণিজ্যিক রাজধানী। বন্দরনগরী হিসেবে অনেক আগেই বিদেশিদের নজর কেড়েছে চট্টগ্রাম। খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে আরব ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে পরিচিত ছিল। এ বন্দরের কারণে বিখ্যাত পর্তুগিজ ঐতিহাসিক ডি বারোস ১৫৫২ সালে চট্টগ্রামকে ‘বাংলা রাজ্যের সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত ও সম্পদশালী নগরী’ হিসেবে উল্লেখ করেন।

চট্টগ্রামের প্রাথমিক ইতিহাস সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া বেশ কঠিন। ঐতিহাসিক লামার বিবরণ অনুযায়ী দশম শতাব্দীতে ‘তারনাথ গোপী চন্দ্র’ নামে এক বৌদ্ধ রাজার অধীনে ছিল চট্টগ্রাম। অন্যদিকে তিব্বতি জনশ্রুতি মতে, দশম শতাব্দীতে কর্মরত বৌদ্ধতান্ত্রিক তিলাযোগীর জš§স্থান আজকের চট্টগ্রাম।

‘চট্টগ্রাম’ নামকরণ সম্পর্কে জানা যায়, ৯৫৩ সালে আরাকানের চন্দ্র বংশীয় রাজা সু-লা-তাইং-সন্দয়া চট্টগ্রাম অভিযানে আসেন। তবে ‘অজ্ঞাত’ কারণে তিনি বেশিদূর অগ্রসর না হয়ে ওই অঞ্চলে থেকে যান। এরপর সেখানে একটি বিশেষ স্তম্ভ তৈরি করেন। স্তম্ভের গায়ে তৎকালীন প্রচলিত ভাষায় লেখা হয় ‘চেৎ-ত-গৌঙ্গ’। বাংলায় যার অর্থ- ‘যুদ্ধ করা অনুচিত’। সেই থেকে এলাকাটি ‘চৈত্তগৌং’ হয়ে যায়। আরাকানীয় পুঁথি রাজাওয়াংয়ে এটি উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত ‘হাজার বছরের চট্টগ্রাম’ গ্রন্থে নামকরণের ধারাটি স্থান পেয়েছে। এই ‘চৈত্তগৌং’ থেকে কালক্রমে ‘চাটিগ্রাম’, ‘চাটগাঁ’ নামকরণ। বর্তমানে ‘চট্টগ্রাম’-এর পাশাপাশি ‘চিটাগং’ বানানের প্রচলন রয়েছে।

বাংলার এক সময়ের অধিপতি গিয়াসউদ্দীন তুঘলক বাংলাকে ‘লখনৌতি’, ‘সাতগাঁও’ ও ‘সোনারগাঁও’ নামে তিনটি প্রশাসনিক এলাকায় ভাগ করেন। ১৩৩৮ সালে ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ সোনারগাঁওয়ের ক্ষমতা দখল করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চল জয় করেন। এরপর সেখানে রাজত্ব শুরু করেন। তার শাসনামলে চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়। এছাড়া তিনি কয়েকটি মসজিদ ও সমাধি সৌধও নির্মাণ করেন। শেরশাহর হাতে সুলতান গিয়াসউদ্দীন মাহমুদ শাহের পতনের পর পর্তুগিজরা চট্টগ্রামে দফায় দফায় আক্রমণ চালায়।

দীর্ঘ ১২৮ বছর চট্টগ্রাম অঞ্চলটি পর্তুগিজ ও মগ জলদস্যুদের আবাসস্থলে পরিণত হয়। এরপর মোগলরা দখল করে নেয় চট্টগ্রাম। অবশ্য পর্তুগিজদের অধীনে থাকাকালে চট্টগ্রাম নগরী ও বন্দর ‘ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র’ হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করে। অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে কলকাতার উত্থান ও উন্নয়ন হয়। এর বিপরীতে গুরুত্ব হারাতে শুরু করে চট্টগ্রাম।

তবে কালক্রমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম। সেইসঙ্গে সাগর, নদী, পাহাড়, প্রকৃতির নৈর্সগিক লীলাভূমি চট্টগ্রাম দেশের অন্যতম পটর্যন অঞ্চল হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০