স্বাধীনতার মাসে নতুন বই: ‘মুক্তিসংগ্রাম সমগ্র: বাংলাদেশ ১৯৭১’

মুক্তিসংগ্রাম সমগ্র: বাংলাদেশ ১৯৭১। আমাদের মুক্তিসংগ্রামবিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। বইটি লিখেছেন কথাসাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরী। আগামীকাল মহান স্বাধীনতা দিবসে বইটি প্রকাশ করবে দেশ পাবলিকেশন্স।

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলা বিভাজন হয়। স্বপ্নভঙ্গ হয় বাঙালি জাতির। বইয়ে এ তত্ত্বও তুলে ধরেছেন লেখক। আমাদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের অবিচার ও বৈষম্য নিয়ে লিখেছেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ; সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা গদ্যে সাজিয়েছেন লেখক। পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের ভূ-প্রকৃতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ও খাদ্যাভ্যাসে অমিল রয়েছে। এসব বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন লেখক। পূর্ব-বাংলার সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদ হয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম ও ত্রিপুরার, তাও ফুটিয়ে তুলেছেন।

এক কোটি গৃহহারা ও ত্রিশ লাখ শহীদের কথা বলেছেন লেখক। তিনি প্রমাণ করেছেন, স্বাধীনতার জন্য আমাদের এক দীর্ঘ সংগ্রামসংকুল সময় পার করতে হয়েছে। সীমাহীন ত্যাগের পাশাপাশি সহ্য করতে হয়েছে নানা নিপীড়ন ও অবমাননা।

‘মুক্তিসংগ্রাম সমগ্র: বাংলাদেশ ১৯৭১’ গ্রন্থটি তিন খণ্ডে বিভক্ত। প্রথম খণ্ড: স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা। প্রথম খণ্ডের অধ্যায়গুলো হচ্ছে, ‘দুর্দশা ও দুর্যোগ’, ‘স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধিকার’, ‘স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা’, ‘একটি জাতিকে হত্যা’ ও ‘শরণার্থী ও দেশত্যাগ’।  দ্বিতীয় খণ্ডের শিরোনাম ‘জয় বাংলা, জয় মুক্তিযুদ্ধ’। এ খণ্ডে ‘সোনার বাংলা বিধ্বস্ত’, ‘জয় বাংলা ও বাংলাদেশ’, ‘জিন্দাবাদ ও পাকিস্তান’ ও ‘বিশ্ববাসী ও বিশ্বশক্তি’ নামে কয়েকটি অধ্যায় রয়েছে। তৃতীয় খণ্ডের নাম দিয়েছেন ‘নতুন দেশ, নতুন দিগন্ত’। ‘নতুন দেশ, নতুন দিগন্ত’, ‘চূড়ান্তাভিযান ও বিজয়’ ও ‘জাতীয় চরিত্র ও আদর্শ’ নামে তিনটি অধ্যায় রয়েছে।

বইটির প্রকাশক অচিন্ত্য চয়ন। তিনি বলেন, ‘বাঙালির পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এ বই। সময় নিয়ে অনেক যতেœ বইটি লিখেছেন আবদুর রউফ চৌধুরী’। তিনি জানান, কথাসাহিত্যিক আবদুর রউফ চৌধুরীর অমর সৃষ্টি এ বই। তিনি আজ বেঁচে নেই। কিন্তু এ বইয়ের মাধ্যমে তিনি পাঠক মনে বেঁচে থাকবেন। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশদ দলিল। এ বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন ড. মুকিদ চৌধুরী। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অজানা শহীদদের স্মরণে।

লেখক পরিচিতি

আবদুর রউফ চৌধুরী ১৯২৯ সালের ১ মার্চ সিলেটের মুকিমপুরে জš§গ্রহণ করেন। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন (ইতিহাস গবেষক) বলেন, ‘আবদুর রউফ চৌধুরী ছিলেন পশ্চাৎপদ ধ্যান-ধারণার ঊর্ধ্বে মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন লেখক। খ্যাতির মোহে নয়, বরং জনমনে অগ্রসর চেতনা সৃষ্টি ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা ছিল তার সাহিত্য সাধনার মূল প্রেরণা ও লক্ষ্য। যেহেতু তিনি সর্বক্ষণ একটি আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখতেন; ফলে তার সৃষ্ট সমগ্র সাহিত্যকর্মেও এর প্রতিফলন ঘটেছে।’

বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান (প্রাবন্ধিক, ফোকলোরবিদ) বলেন, ‘একজন মনীষী, যিনি তার মনন, মেধা ও সামাজিক জীবনে সব আবিলতার বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তার শ্রেষ্ঠত্ব, মাধুর্য ও গরিমাকে আনন্দের সঙ্গে স্বীকার করছি।’

লেখকের অন্যান্য রচনার মধ্যে রয়েছে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও ইতিহাস। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের ওপর স্মৃতিকথা ও গবেষণাধর্মী লেখাও লিখেছেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ ‘পরদেশে পরবাসী’, ‘নতুন দিগন্ত সমগ্র’ (তিন খণ্ড), ‘গল্পসম্ভার’, ‘গল্পভুবন’, ‘একটি জাতিকে হত্যা’, ‘স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতা’, ‘১৯৭১’ (দুই খণ্ড), ‘মহান একুশে’, ‘ফরাসী বিপ্লব’, ‘কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলস’ প্রভৃতি।

১৯৯৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পরলোকে গমন করেন তিনি।

 

মো. ইমরান হোসেন, গণমাধ্যমকর্মী

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০