প্রস্তাবিত সীমান্ত দেয়াল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মেক্সিকোর সতর্কতা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে যে দেয়াল নির্মাণ করতে যাচ্ছেন, তাতে কাজ করার ব্যাপারে স্থানীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করেছে মেক্সিকো। এদিকে এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানিগুলোকেও সতর্ক করেছে ক্যালিফোর্নিয়া, সানফ্রানসিসকো ও নিউইয়র্কের আইনজীবীরা। প্রস্তাবিত আইনে দেয়াল নির্মাণে শামিল হলে শাস্তি দেওয়া হবে কোম্পানিগুলোকে। খবর দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।

সম্প্রতি মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের আওতাধীন কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশন এজেন্সি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে প্রায় দুই হাজার মাইল দীর্ঘ দেয়াল নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে।

দরপত্র আহ্বানের পর মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের অনেক কোম্পানি এ প্রকল্পে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আর এ প্রেক্ষিতে মেক্সিকোর অর্থমন্ত্রী নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আপনারা চাইলে এ সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ করতে পারেন। এতে আমরা কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছি না। তবে আমার বিশ্বাস, আপনাদের প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি ও সম্মানের কথা বিবেচনা করে নিজেদের স্বার্থে অবশ্যই এ সীমান্ত প্রাচীর বানাতে এগিয়ে আসবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদিও আমরা কোনো আইনি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছি না। তবুও বলে রাখি, মেক্সিকো ও মেক্সিকান ভোক্তারা দেশের প্রতি অনুগত নয়Ñএমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে, তা তারা ভালো করেই জানে।’

যদিও লাভের কথা চিন্তা করে কিছু মেক্সিকান প্রতিষ্ঠান এ সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণে রাজি হয়েছে। অধিকাংশ মেক্সিকান নাগরিকই এ প্রস্তাবের বিপক্ষে।

বিশ্বের অন্যতম সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সিমেক্স জানায়, তারা সীমান্ত প্রাচীরের জন্য সিমেন্ট ও কাঁচামাল দেবে। তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিমেন্টোস ডি চিহুয়াহুয়াও এ প্রকল্পে কাজ করার ব্যাপারে সম্মতি জানায়। এছাড়া মেক্সিকোর বিভিন্ন কোম্পানি এ প্রকল্পে কাজ করার জন্য সম্মতি জানিয়েছে।

এদিকে দেয়াল নির্মাণের এ প্রকল্পে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আইন প্রস্তাবনার মাধ্যমে মার্কিন কোম্পানিগুলোকেও সতর্ক করেছে ক্যালিফোর্নিয়ার তিনজন ডোমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতা। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, দেয়াল নির্মাণে শামিল হলে শাস্তি দেওয়া হবে কোম্পানিগুলোকে।

প্রস্তাবিত আইনে ক্যালিফোর্নিয়ার দুটি সরকারি পেনশন ফান্ডকে বিতর্কিত এ দেয়াল নির্মাণে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোকে সহায়তা না করার আহ্বান জানানো হয়।

আইনপ্রণেতাদের একজন ফিল টিং বলেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়া দেয়াল নয়, সেতু নির্মাণ করে থাকে!’ লজ্জাজনক এ দেয়াল নির্মাণের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত থাকতে চায় না অঙ্গরাজ্যটি।

টিং জানান, অভিবাসীদের গল্প নিয়ে এ অঞ্চলের ইতিহাস গড়ে উঠেছে, তাই অভিবাসন ঠেকাতে নির্মিতব্য এ দেয়াল মার্কিন মুলুকের দুঃস্বপ্নের নামান্তর।

ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে একই ধরনের বেশকিছু প্রস্তাব উত্থাপিত হচ্ছে। এ ধরনের একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন সানফ্রানসিসকোর স্থানীয় একজন কর্মকর্তা। চলতি বছরের শুরুতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি দেয়াল নির্মাণে অংশগ্রহণকারী কোম্পানিগুলোকে বয়কট করার আহ্বান জানান নিউইয়র্কের আইনপ্রণেতা নিলি রোজিক।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রায় দুই হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ নিয়ে মেক্সিকো সিটি ও ওয়াশিংটটের মধ্যে কূটনৈতিক সংকট এবং বিশ্বজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচনার মধ্যেই দেয়াল নির্মাণে সিমেন্টসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করতে চায় অনেক প্রতিষ্ঠান। যুক্তরাষ্ট্র সরকার দেয়াল নির্মাণ প্রকল্পে অংশগ্রহণে আগ্রহী কোম্পানিদের কাছ থেকে আবেদনপত্র জমা নিয়েছে। ওই প্রাথমিক তালিকায় রয়েছে ৬০০ কোম্পানি ।

এর মধ্যে অন্যতম ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ডভিত্তিক লাফার্জহোলসিম। এক সাক্ষাৎকারে কোম্পানিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অলসেন দেওয়াল নির্মাণের বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানান।

অলসেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে কোনো ধরনের অবকাঠামোগত প্রকল্পে উপকরণ সরবরাহে আমরা প্রস্তুত। আমরা সিমেন্ট জগতে নেতৃত্বস্থানীয়। সুতরাং সব ক্রেতাকেই সমান গুরুত্ব দেবো। যুক্তরাষ্ট্রে বেশি বেশি ভবন নির্মাণ বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমাদের জন্য ইতিবাচক।

বিতর্কিত এ দেয়াল নির্মাণে সিমেন্ট বা অন্য উপকরণ সরবরাহে কোম্পনিটির সুনামে কোনো প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, লাফার্জহোলসিম কোনো রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িত নয়। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহই আমাদের লক্ষ্য। বিষয়টিকে আমরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি না।

সাত মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞায় ট্যাক্সি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান উবার সমর্থন দিয়েছিল। এতে কোম্পানিটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এমনকি কয়েক হাজার গ্রাহক তাদের সেলফোন থেকে উবারের অ্যাপ মুছে দিয়েছে। তাই হোলসিম বা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠান বিতর্কিত দেয়াল নির্মাণে উপকরণ সরবরাহ করলে একই ধরনের প্রতিক্রিয়া আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

যুক্তরাষ্ট্রে লাফার্জহোলসিমের প্রতিদ্বন্দ্বী আয়ারল্যান্ডের সিমেন্ট উৎপাদনকারী সিআরএইচ। ইতোমধ্যে কোম্পানিটি ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণে কোনো ধরনের উপকরণ সরবরাহ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের নির্বাচনী প্রচারের অংশ ছিল অবৈধ অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিতে মেক্সিকো সীমান্তজুড়ে দেয়াল নির্মাণের। এমনকি তিনি ওই দেয়াল নির্মাণের অর্থ মেক্সিকোকেই দিতে হবে বলে দাবি জানিয়েছিলেন। তবে মেক্সিকো এ অর্থ দিতে অস্বীকার করেছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০