বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে। বাদ যায়নি বাংলাদেশও। এতে প্রায় সব দেশের অর্থনীতিতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে গতকাল আলোচকদের আলোচনায় এসব কথা ওঠে আসে। মারুফ রনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট সাব্বির আহমেদ এবং সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী।
অনুষ্ঠানে সাব্বির আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে একটি নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বাংলাদেশ এ বাইরে নয়। ইতোমধ্যে দেশের আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে। বিজিএমইএ’র হিসাব মতে আরএমজি খাতে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার অর্ডার বাতিল হয়েছে। সামনে হয়তো আরও অর্ডার বাতিল হবে। তাই এ সময় ইন্ডাস্ট্রিজগুলো যাতে রক্ষা করা যায় সেক্ষেত্রে তারল্য সরবরাহসহ আরও বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। অর্থাৎ কোম্পানিগুলো যাতে বন্ধ না হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে এ অবস্থা দুই ধরনের বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে দেবেন। প্রথমত, যাদের দেওয়ালে একেবারে পিঠ ঠেকে গেছে। কারণ তাদের অনেকের আত্মীয়স্বজন বিদেশ থেকে টাকা পাঠাত, এখন সেটা করানোভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। আবার স্থানীয়ভাবে অনেক সুযোগ-সুবিধা কমে যাচ্ছে। তাদের এখন টাকার প্রয়োজন হবে সুতরাং এ সময়ে বাধ্য হয়ে তারা শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারে। কথা হচ্ছে, এ সুযোগটা যাতে অসৎ উদ্দেশ্য অন্য কেউ না নিতে পারে। তাই বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসইকে এ ব্যাপারে জোড়াল ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া আরও বাজারসংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। দ্বিতীয় হচ্ছে বিদেশি বিনিয়োগকারীও শেয়ার বিক্রি করে দেবেন। কারণ বিশ্বজুড়ে এখন একটা তারল্য সংকট বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে পাকিস্তান পুঁজিবাজার থেকে কিছু বিদেশি বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের পুঁজিবাজার থেকেও বিদেশি বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করতে পারেন।
এদিকে ফজলুল বারী বলেন, পুঁজিবাজার এখন আস্থার সংকটে রূপ নিয়েছে। শুধু পুঁজিবাজার নয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতেও আস্থার সংকটে রয়েছে। অর্থাৎ এ দুটি খাতে এখনও সুশাসন নড়বড়ে অবস্থায়। বিনিয়োগকারীদের আস্থা তৈরি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং দুষ্টু লোকদের দৃশ্যমান শাস্তি দিতে হবে। আবার যখন বাজার খারাপ অবস্থায় থাকে তখন সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা চাওয়া হয়। যখন বাজার ভালো থাকে তখন কোনো প্রণোদনা চাওয়া হয় না। তাহলে আপনাদের রিজার্ভ কোথায়। এখন বাজার একটি ক্রান্তিকালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এখন ওই রিজার্ভের অর্থ বিনিয়োগ করেন এবং আপনাদের কর্মকর্তাদের ওপর সদায় হোন। এখন মিডিয়াসহ অনেক কর্মক্ষেত্রে কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে। এটা আসলেই অমানবিক। এমনিতেই করোনাভাইরাসে সবার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। তার মধ্যে আবার কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ সময়ে ইপিএস বাড়ানোর মতো কোম্পানিগুলোকে সচল করার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। ওষুধ, সিমেন্ট, বস্ত্রসহ আরও অনেক কোম্পানি রয়েছে, যাদের সচল রাখা সম্ভব। আবার সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অহেতুক ব্যয় কমিয়ে দিতে হবে এবং ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া কমাতে হবে। যাতে ব্যাংকের ওপর চাপ না পড়ে। তাই এ পরিস্থিতে সবাই মিলে এগিয়ে আসতে হবে। যদি এক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসা যায় সেক্ষেত্রে করোনাভাইরাস ভীতিটা দূর করা যাবে। কারণ বিগত বছরের অনেক দুর্যোগ সক্ষমতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছি।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ