শেয়ার বিজ ডেস্ক: আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালালে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়। বাসস।
স্বাধীনতার এ ৪৯তম বার্ষিকীতে জাতি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানোসহ সব জাতীয় কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। আওয়ামী লীগও এর আগে স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি বাতিল ঘোষণা করে।
১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা।
সেনা অভিযানের শুরুতেই হানাদার বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
সে সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তাজনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এ ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ তৃতীয় খণ্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ ঘোষণা উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ২৫ মার্চ মধ্য রাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে এ ঘোষণা দেন তিনি, যা তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের (ইপিআর) ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ বেশ কয়েকজন শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন।
বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’ ২০১৬ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশের সংবিধানের উপক্রমণিকায় এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে বাংলার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ জনসভায় এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করিয়া স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হইবার ডাক দেন এবং ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’