আসবাব শিল্পে ব্যতিক্রম এ্যলয়

জাকারিয়া পলাশ: গৃহ থেকে অফিস সবখানে আসবাবপত্রের নানা সাজসজ্জা এখন প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। যে কোনো ঘরের আভিজাত্য ও সৌন্দর্যের প্রমাণ মেলে তার আসবাবে। নতুন নতুন নকশা আর উপকরণে আসবাব তৈরি এখন শিল্পবোধেরও ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এক সময় কাঠের ওপর নানা রকম কারুকাজ করে খাট-পালঙ্ক থেকে শুরু করে রাজকীয় সিংহাসনও সাজানো হতো। বর্তমানে আসবাবপত্র তৈরিতে কাঠের পাশাপাশি স্টিল, লোহা, প্লাস্টিক, পারটেক্স বোর্ডসহ আরও নানা উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে। আসবাবপত্রে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যবহার এরই এক নতুন সংযোজন।

এখন দেশেই প্রায় সব ধরনের ফার্নিচার অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে তৈরি হচ্ছে। এমনি এক ফার্নিচার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ্যলয়। ওজনে হালকা ও দীর্ঘস্থায়ী পণ্য হিসেবে ক্রেতার মন কেড়েছে তাদের তৈরি অ্যালুমিনিয়াম ফার্নিচার। এটি বাংলাদেশে একমাত্র অ্যালুমিনিয়াম ফার্নিচার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। তারা প্রায় দেড় যুগ ধরে বাংলাদেশে অ্যালুমিনিয়াম শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে।

নতুনত্ব ও চাহিদার কথা বিবেচনায় রেখে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা জানান, তৈজসপত্র থেকে শুরু করে খাট-পালঙ্ক গৃহস্থালির প্রায় সব রকম সামগ্রী তৈরি করেন তারা।

অ্যালুমিনিয়াম ও এইচডিএফ (প্রক্রিয়াজাতকৃত এক ধরনের বিশেষ কাঠ) দিয়ে তৈরি হয় তাদের ফার্নিচার। সংশ্লিষ্টদের মতে, এসব পণ্য কাঠের আসবাবপত্রের চেয়ে টেকসই। এ্যালয়ের কোনো পণ্যে মরিচা পড়ে না বা ঘুণে ধরে না। এছাড়া অ্যালুমিনিয়াম আগুন ও পানি প্রতিরোধক। ফলে প্রত্যেকটি পণ্যই কাঠ কিংবা স্টিলের পণ্যের চেয়ে বেশি স্থায়ীত্বসম্পন্ন হয়ে থাকে।

রামপুরায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শো-রুমের বিক্রেতারা জানান, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি ফার্নিচারের ওপর দেশি-বিদেশি ক্রেতাদের বেশ আগ্রহ রয়েছে। তবে দেশে এখনও ফার্নিচারের চেয়ে কিচেন অ্যাকসেসরিজ বা রান্নাঘরের সামগ্রীর চাহিদা বেশি। এজন্য অ্যালয়ের শো-রুমগুলোতে কিচেন সজ্জার জন্য সবধরনের আইটেম পাওয়া যায়। নানা আকারের র‌্যাক, আলমারি, ড্রয়ার ও হ্যাঙারের পাশাপাশি সম্পূর্ণ কিচেন ডেকোরেশন মিলছে এ্যালয়ে।

প্রতিষ্ঠানটির শো-রুম ইনচার্জ নিরব সরকার বলেন, প্রতিটি আইটেম তৈরির জন্য সুনির্দিষ্ট নকশা তৈরি করা হয়। তারপর সেই ডিজাইন অনুসরণ করে নানা আসবাবে রূপ দেওয়া হয়।

প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় কাজ করে প্রায় ৪০ জন কারিগর। সেখানে মেশিনের সাহায্যে অ্যালুমিনিয়ামের বড় বড় পাত কাটা হয়। অ্যালুমিনিয়াম সাধারণ স্টিল বা লোহার চেয়ে বেশি দামি। তাই অপচয় যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়।

নিরব সরকার জানান, তিনি পলিটেকনিক থেকে পাস করা একজন নকশাবিদ। এ্যলয়ের জন্য কিচেন ক্যাবিনেট, শো-কেসসহ নানা পণ্যের ডিজাইন করেছেন। এছাড়া অ্যালুমিনিয়ামের খাট, ড্রেসিং টেবিল, বুকশেলফ, ওয়্যারড্রব, কম্পিউটার টেবিলসহ নানা ধরনের পণ্যের স্বতন্ত্র নকশাও রয়েছে তাদের।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাঁচটি শো-রুমে বিক্রি হচ্ছে এ্যলয়ের ফার্নিচার। এছাড়া ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় নিজস্ব প্যাভিলিয়ন নিয়ে পণ্য প্রদর্শন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

কাস্টমারদের একটি ডেটাবেজও রয়েছে তাদের। তাছাড়া কয়েকটি ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং কোম্পানির সঙ্গেও কাজ করছে এ্যালয়।

এ্যলয় ফার্নিচার ওজনে হালকা ও টেকসই হওয়ায় এসব পণ্যের প্রতি অনেকের আগ্রহ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পান্থপথ শো-রুমের ইনচার্জ জাহিদুল ইসলাম জানান, দেশজুড়ে আমাদের অনেক ক্রেতা রয়েছে। অনেকে ঢাকা থেকে সিলেট, রাজশাহীসহ নানা শহরে আমাদের পণ্য নিয়ে যান। ফার্নিচার ছাড়াও স্টিলের তৈরি গ্যাসের চুলা, কিচেন হুড, সিঙ্কসহ এ্যালয়ে অনেক পণ্য রয়েছে, যা ক্রেতা সমাদৃত।

সাংবাদিক