সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী শ্লথ হয়ে পড়েছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এর প্রভাবে বাংলাদেশেও চলছে লকডাউন। ফলে দুই সপ্তাহ ধরে বন্ধ অধিকাংশ ব্যবসায়িক কার্যক্রম। তাতে কাঁচামাল, শ্রমিক ও পরিবহন কমে যাওয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে ব্যবসায়িক লোকসান। দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জেও দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট। তাতে নিয়মিত চাহিদার পণ্য সরবরাহ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এতে বাড়তে পারে ভোগ্যপণ্যের দাম।
দেশে ভোগ্যপণ্যের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজারটিতে স্বাভাবিক সময়ে কয়েক হাজার পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করে। এসব ট্রাকে পণ্য খালাস-বোঝাইসহ নিয়মিত কার্যক্রমে অংশ নেয় প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক। কিন্তু কভিড-১৯-এর ফলে দুই সপ্তাহ ধরে বাজারটির চিত্র ভিন্ন। নেই আগের মতো পণ্যবাহী গাড়ি প্রবেশ। তবে বর্তমানে শতাধিক ট্রাক প্রবেশ করলেও শ্রমিক সংকটে সেগুলোর খালাস ও বোঝাইয়ের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে খালাসে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগলেও বর্তমানে কয়েক দিন লাগছে। এতে বিপাকে পড়েছেন আড়তদাররা।
এ বিষয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘লকডাউনের পর থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ব্যবসা কমে গেছে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিচ্ছে না। অধিকাংশ শ্রমিক বাড়ি চলে গেছে। আর যারা শহরে আছে তারাও কাজ করছে না। এতে আমাদের পণ্য খালাসে বাড়তি সময় লাগছে। একটা ট্রাক খালাস-বোঝাইয়ে তিন-চার দিন সময় লাগছে। অনেক সময় আমরা নিজেরাই শ্রমিকের কাজ করছি। বাজারে পণ্যের চাহিদা আছে, কিন্তু শ্রমিক সংকটে জোগান দিতে পারছি না।’
এদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাবে শ্রমিক, পরিবহন ও শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়া চট্টগ্রাম বন্দরেও কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে। কমে গেছে কনটেইনার হ্যান্ডলিং। বুধবার পর্যন্ত জটে পড়েছে প্রায় ৪৫ হাজার কনটেইনার। আর বহির্নোঙরে অলস পড়ে আছে ৪৩টি জাহাজ। বিপরীতে মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল মাত্র সাড়ে তিন হাজারের মতো। যদিও স্বাভাবিক সময়ে সংখ্যাটা এর কয়েক গুণ বেশি থাকে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিবহন শাখা সূত্রে জানা যায়, ৮ এপ্রিল বিশেষ বার্থ ও বহির্নোঙরে ১০৩টি পণ্যবাহী জাহাজ ছিল। এর মধ্যে ৬০টি ফিডার ভেসেল থেকে কার্গো, কনটেইনার ও অন্যান্য পণ্য খালাস করা হয়। আর ৪৩টি জাহাজ থেকে কোনো কিছুই খালাস করা হয়নি। একই দিনে বন্দরের ইয়ার্ডে মোট কনটেইনার ছিল ৪৪ হাজার ৮৩৬টি। আর মোট কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল মাত্র তিন হাজার ৪৩৪টি।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন লকডাউন থাকলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতির মুখামুখি হবেন। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যাবেন। একইসঙ্গে আমদানি-রপ্তানির স্বাভাবিক গতি হারানোর ফলে সরকারও মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাবেন। তাই এ সময়ে ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতির মুখামুখি না হন, সেজন্য ব্যাংক সুদের হার কমানো উচিত।
অনেক সময় আমরা নিজেরাই শ্রমিকের কাজ করছি। বাজারে পণ্যের চাহিদা আছে, কিন্তু শ্রমিক সংকটে জোগান দিতে পারছি না।’