করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্রস্তুত হচ্ছে ‘চর আলগী হাসপাতাল’

রহমত রহমান, আকাশ মো. জসিম: দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন জেলা যোগ হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়লে চিকিৎসা দিতে সরকারকে হিমশিম খেতে হবে। ফলে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রতিটি জেলায় করোনা রোগীর চিকিৎসার আলাদা ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

#### বেড সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হচ্ছে

#### নেই আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, অক্সিজেন, নেবুলাইজার

নোয়াখালী একটি বিদেশি অধ্যূষিত এলাকা। ১ মার্চ থেকে জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার প্রবাসী দেশে এসেছেন। এখানে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য সরকারি-বেসরকারি কোন হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই। তবে জেলার সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ১০০টি আইসোলেশন বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

#### বেশিরভাগ চিকিৎসা সরাঞ্জাম অকেজো

#### জেলার মানুষ সাধুবাদ জানালেও স্থানীয়দের আপত্তি

এ জেলায় একজন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া করোনার উপসর্গ দেওয়া ৭১ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, যাদের নেগেটিভ এসেছে। তবে জেলায় করোনা রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসায় চর আলগী হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। ২০ শয্যার এ হাসপাতালে শুধু করোনা রোগীদের চিকিৎসা হবে।

বেড সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হচ্ছে। চিকিৎসার আধুনিক সরঞ্জাম থাকলে বর্তমানে এখানে শুধু সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ জনবল, চিকিৎসক সরঞ্জাম বিষয়ে কার‌্যক্রম শুরু হয়েছে। করোনা রোগীর চিকিৎসা উপযোগী করতে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

সূত্র আরো জানায়, এ হাসপাতালটি করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য বাছাই করার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এ এলাকায় জনসমাগম কম। এ হাসপাতালে তেমন ভর্তি রোগী থাকে না। বর্হি:বিভাগে নামমাত্র চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালের পরিবেশ, অবকাঠামো দিক, যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো। জেলা সদর থেকে বেশ দূরে। হাসপাতালটি বিশেষায়িতভাবে তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে চিকিৎসার আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। কিন্তু চিকিৎসক, নার্স, জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জাম সংকটসহ বেশ কিছু কারণে দীর্ঘদিন ধরে এখানে ভালো চিকিৎসা হয় না।

সূত্র বলছে, হাসপাতালটি ২০ শয্যার। করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য আরো ১০ শয্যা বাড়িয়ে ৩০ বেড প্রস্তুত করা হচ্ছে। করোনা রোগীর চিকিৎসায় অপরিহার‌্য সরঞ্জাম আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর, যা হাসপাতালে নেই। একটি আধুনিক জেনারেটর থাকলেও তা নষ্ট। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ লাইট ও সুইচ নষ্ট। আবাসিক মেডিকেল অফিসারসহ (আরএমও) চারজন চিকিৎসক, দুইজন নার্স আর কিছু সংখ্যক জনবল রয়েছে।

হাসপাতাল শুধুমাত্র করোনা রোগীর ভর্তি ও চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে-বিষয়টিকে জেলার মানুষ সাধুবাদ জানালেও বিরোধীতা করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয়রা জানান, এলাকার বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। এখনে করোনা রোগী ভর্তি করা হলে পুরো এলাকায় করোনা ছড়িয়ে পড়বে। কেউ আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করাতে পারবে না। সেজন্য এ হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা শুরু না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মমিনুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, করোনা রোগীদের জন্য এ হাসপাতালটি বাছাই করা হয়েছে। করোনা রোগী চিকিৎসার উপযোগী প্রস্তুতের কাজ চলছে। কাজ প্রায় শেষ। আইসিইউ, ভেন্টিলেটর বিষয়ে তিনি বলেন, চেষ্টা চলছে। কেনো এ হাসপাতালটি কেবল করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য বাছাই করা হলো-এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ হাসপাতালটি একটি সাইটে সেজন্য বাছাই করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলা হাসপাতালে রোগী থাকলেও এ হাসপাতালে রোগী কম থাকে।

তিনি বলেন, চিকিৎসা শুরু হলে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা দিতে পল্লী বিদ্যুৎকে বলা হয়েছে। এ হাসপাতালে তো চিকিৎসক-নার্স কম-এ বিষয়ে তিনি বলেন, লাগলে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, করোনা রোগীদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল ও জেলার আরো কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

চর আলগী হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শিরিন আক্তার শেয়ার বিজকে বলেন, করোনা রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরির কাজ চলছে। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। করোনা রোগী ভর্তি শুরু হলে আমরা অন্য কোন ভর্তি রোগী রাখবো না, আমাদের সেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আইসোলেশনের জন্য ৩০ বেড প্রস্তুত করা হচ্ছে। আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা নেই। অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট ছিল মেরামত করা হয়েছে। নতুন করে চালক দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তুতি বিষয়ে তিনি বলেন, সক্ষমতা অনুযায়ী আমরা প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। বর্তমানে আমিসহ চারজন চিকিৎসক রয়েছে। এ স্বল্প চিকিৎসক দিয়ে করোনা রোগী চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। চিকিৎসা, নার্স ও জনবল দেওয়া হবে কিনা-এ বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন স্যার আলোচনা করছেন বলে জানি। এখন পর‌্যন্ত আমরা প্রয়োজনীয় অক্সিজেন, নেবুলাইজার এবং প্রয়োজনীয় ওষধ জোগাড়ের চেষ্টা করছি।

সূত্র আরো জানায়, কবিরহাট উপজেলার চর আলগী হাসপাতালটি ২০ শয্যার। ২০০০ সালে সৌদি সরকারের আর্থিক অনুদানে প্রকল্পের আওতায় ঘোষবাগ ইউনিয়নের চর আলগী বাজারের পাশে তিন তলার এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। উন্নয়ন খাতে হতে জনবল নিয়োগ দিয়ে ২০০১ সালের ২৪ মার্চ উদ্বোধন শেষে সেবা কার্যক্রম চালু হয়। মূলত চরাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দুরে হাসপাতালটি নির্মাণ করা হয়।

সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়ার শেষ হয়ে গেলে হাসপাতালটি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। আধুনকি সব সরঞ্জাম সমৃদ্ধ অপারেশন থিয়েটার, ডেন্টাল চেয়ার, ইসিজি, এনেসথেসিয়া যন্ত্র, এক্সরে, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনের বেশিরভাগ অকজো। ফলে সাধারণ কয়েকটি রোগের নামমাত্র ওষুধ ও চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনো সেবা পান না এলাকাবাসী।

###

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০