করোনাকালে সাধারণ মানুষের পাশে শিক্ষার্থীরা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। কার্যত লকডাউন হয়ে পড়েছে পুরো দেশ। অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা কি সে নির্দেশ মানছি? দুঃখের বিষয়, দেশের অনেক মানুষ এ বিষয়ে অসচেতন। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে নিজ এলাকায় কাজ করছেন। এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন আলী ইউনুস হৃদয়

মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি: মারুফ হাসান মিলু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস থেকে গত ১৭ মার্চ বাড়িতে যাই। রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নে আমার বাড়ি। এখানকার অনেক মানুষ করোনাভাইরাস বিষয়ে এখনও অসচেতন। ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই। তাই স্থানীয় বড়ভাই, বন্ধু ও ছোটভাই—সবার সহযোগিতা চাইলাম। সবাই ঐকমত্য পোষণ করলেন, যেন আমরা এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। এরপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, উপজেলা চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় বসি। প্রথমে মসজিদের ইমামদের সঙ্গে কথা বলে মসজিদে সচেতনতামূলক ব্যানার টানিয়ে দিই। এরপর ছাত্র কল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে গ্রামের মানুষের মাঝে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহার করার বিষয়ে প্রচার চালাই। একইসঙ্গে সচেতনতামূলক লিফলেট, সাবান ও মাস্ক বিতরণ করি। কয়েক দিনের মধ্যে এলাকার প্রায় ২০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে। এ কাজে প্রায় ১৫ স্বেচ্ছাসেবী সহযোগিতা করছেন।

স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠনের মাধ্যমে কাজ করছি: রফিকুল ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনুধাবন করে কুমিল্লার দড়িচর এলাকায় আমার গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠনের চেষ্টা করি। ১৯ মার্চ ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি পোস্ট দিলে অনেকের সাড়া পাই। এরপর হোমনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি টিম গঠন করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহায়তায় আমাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রথমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে করোনার ভয়াবহতা তুলে ধরে এলাকায় মাইকিং করি। মসজিদের ইমামদের অনুরোধ করি মুসল্লিদের সচেতন করতে। একইসঙ্গে এলাকার মানুষের মাঝে মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ডওয়াশ বিতরণ করি। এছাড়া অসহায় মানুষদের খাবার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন ২০০ পরিবারকে সহায়তা করার জন্য চেষ্টা করছি। অনুরোধ করব, দেশের এ কঠিন সময়ে সবাই যেন এগিয়ে আসেন।

সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছি: মুস্তাকিম খান লিমন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আমার বাড়ি নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করলে বাড়িতে চলে আসি। স্থানীয় লোকজন দেখা হলেই আমাকে প্রশ্ন করতেন, করোনাভাইরাস সত্যি, না কি গুজব? বাড়িতে এসেও অনেকে জানতে চাইতেন, করোনাভাইরাস কী? খেয়াল করে দেখলাম, তাদের মাঝে কোনো সচেতনতা নেই। আসমা ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামটি পিছিয়ে পড়া জনপদ। ভাবলাম, আমার এগিয়ে আসা উচিত। এজন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ও পাশ করা কয়েকজন শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টায় প্রথমে স্থানীয় বাজারে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করি। এছাড়া বাড়িতে বাড়িতে করোনাভাইরাস সম্পর্কে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করি। এখন আমরা স্থানীয় সবার সঙ্গে পরামর্শ করে হতদরিদ্র মানুষদের খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি মনে করি, আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

রান্না করে মানুষকে খাওয়াচ্ছি: রিপন মাহমুদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আমার বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলায়। বর্তমানে করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে সিলেটে অবস্থান করছি। নিজের অবস্থান থেকে যে মানুষদের ঘর নেই, রাস্তায় থাকেন, তাদের সপ্তাহে এক দিন রান্না করে খাওয়াচ্ছি। করোনা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য হ্যান্ডমাইক কিনে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে টিলারগাঁও, বড়গুল ও বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকায় ক্যাম্পেইন করেছি। পাশাপাশি নানা যানবাহনে জীবাণুনাশক ওষুধ স্প্রে করেছি। মাস্ক, হাত ধোয়ার সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করেছি। পাহাড়ি জনপদের মানুষের কাছেও খাবার পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। নিজেকে সুরক্ষিত রেখে সবজি কিনে ভ্যানে করে ঘরে ঘরে দিচ্ছি। এছাড়া নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষকদের মাধ্যমে তহবিল গঠনের কাজ অব্যাহত রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০