করোনায়র প্রভাব

প্রি-ফেব্রিকেটেড শিল্পে ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নোভেল করোনা (কোভিড-১৯) ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার কারণে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্পের কাঁচামাল গত ডিসেম্বর থেকে আমদানি বন্ধ থাকার কারণে এ শিল্পগুলো ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাস থেকে আগামী জুন পর্যন্ত আগাম পর্যবেক্ষণে বুঝা যাচ্ছে, স্টীল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এসবিএমএ) এর অন্তর্ভূক্ত প্রায় ৩০টি প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাসোসিয়েশনের বাইরে আরোও প্রায় ২০০টি প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোববার (১২ এপ্রিল) এসবিএমএ এর সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিল্পের আতুরঘর হিসেবে খ্যাত প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্প আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দেশের ৯৯% শতাংশ ফ্যাক্টরী শেড বিল্ডিং বর্তমানে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং দ্বারা নির্মিত হয়। প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং সাশ্রয়ী, ভূমিকম্প সহনশীল এবং গুণগত মান ঠিক রেখে অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স ও কম্প্লায়েন্স মেনে স্বল্প ব্যয়ে সর্বপরি স্বল্প সময়ে স্থাপনযোগ্য।

এজন্যে শিল্পকারখানা স্থাপনে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং এর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু এ শিল্পের কাঁচামালের ৯৫% শতাংশ চীন দেশ থেকে আমদানি হয়ে থাকে। গত ডিসেম্বর থেকে করোনাভাইরাস চীন দেশে সংক্রমিত হওয়ার কারণে দেশীয় আমদানীকারকরা নানা ধরণের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

মো. রাশেদ খান বলেন, এ শিল্পের সঙ্গে প্রায় ২ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে আরোও ৮ লাখ জনবল জড়িত। বর্তমানে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রায় ১ লাখেরও বেশি স্থায়ী-অস্থায়ী শ্রমিক ও কর্মচারী চাকরিচ্যুত, মাসিক বেতন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্পগুলোতে বর্তমানে চরম সংকটজনক পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় চলমান শিল্পকারখানা, সরকারের সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার ও গুদাম নির্মাণ কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ। আবার কিছু কিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউনে গেছে।

তিনি বলেন, কাঁচামারের অভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্ডারের বিপরীতে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক বিল্ডিং সরবরাহ করতে না পারায় সময়মত বিল পায়নি। ফলে তাদের ব্যাংকের কিস্তি পরিশোধ, ডিল সমন্বয়, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি, কারখানার বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল পরিশোধসহ কোন কিছু সময় মতো করতে পারেনি বা পারছে না। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তকারী ও সমোয়পযোগি এবং আশাজাগানিয়া পদক্ষেপ বলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

রাশেদ খান বলেন, এমন অবস্থা অব্যাহত থাকলে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্পগুলোর পক্ষে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে না। বিশ্বায়নের যুগে বর্তমান সরকার যে সব সেক্টরগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে ভিশন ২০২১ থেকে উন্নয়ন রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এর মধ্যে প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্প অন্যতম। কারণ প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্প ছাড়া উন্নয়ন তথা শিল্পায়নের কথা বর্তমানে চিন্তাও করা যায় না। বর্তমান এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ তহবিল থেকে অনুদান প্রদানের জন্য অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করা হয়।

এছাড়াও তিনি এই শিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন বাবদ প্রতিমাসে প্রত্যেক কর্মচারীকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান, প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং শিল্পগুলোর মাসিক বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল ও পানির বিল ডিসেম্বর পর্যন্ত মওকুফ, শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতনভাতাদির ওপর আয়কর মওকুফ এবং কারখানাগুলো চালু রাখার জন্য দুই শতাংশ হারে সরল সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসাবে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং ছাড়া কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা যেমন ভাবা যায় না তেমনি এ শিল্পের বিকাশ ছাড়া দেশীয় শিল্পের দ্রুত বিকাশ অসম্ভব। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর ভাষনে জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়েছে। কারণ তিনি সকল শিল্পের জন্য এ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। তিনি যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তা দেশীয় শিল্প-ব্যবসায় বাণিজ্য ও সর্বোপরি করোনা পরবর্তী বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মো. রাশেদ খান প্রি-ফেব্রিকেটেড স্টীল বিল্ডিং  শিল্পের জন্য আমদানি পর‌্যায়ে যে ৫% অগ্রিম কর আরোপ করা হয়েছে তা মওকুফ করার জন্য অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আর এই শিল্পের কাঁচামাল আমদানি পর‌্যায়ে ১৮০ দিনের ডেফার্ড এর পরিবর্তে ৩৬০ দিনের ডেফার্ড সুবিধা প্রদানেরও ব্যবস্থা রাখা অতীব জরুরী।

###

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০