যমুনার চরে ফসলের সমারোহ

শরীফ আহমদ ইন্না: চরের যেদিকে দুচোখ যায়, শুধু ফসল আর ফসল। সরিষা, টমেটো, বাদাম, ডাল, সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, তিল, মিষ্টি আলু, ধনেসহ নানা ফসল ফলেছে যমুনার চরে। নদীভাঙনের শিকার মানুষের চোখেমুখে যেন স্বস্তির পরশ দিচ্ছে এসব ফসল। প্রকৃতই সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর চরে এখন ফসলের সমারোহ। চরের মাটিতে ফলছে নানা ফসল। চলতি মৌসুমে যমুনা নদীর উজানে কাজীপুর থেকে ভাটির চৌহালী পর্যন্ত বিস্তীর্ণ চরে এবার চাষ করা হয়েছে নানা ফসল।

গত বছরের বর্ষা মৌসুমে যমুনায় অনেকের বসতভিটা হারিয়ে গেলেও এখানকার উৎপাদিত ফসল তাদের শক্তি ও সাহস জুগিয়েছে। এখন চলছে বোরো ধান রোপণের কাজ। তারা মুক্তি পেয়েছেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে। চরের মানুষের সংসারে এসেছে সচ্ছলতা।

যমুনা নদীর কারণে প্রতি বছর অনেক মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে যায়। নদীপাড়ের মানুষের আশীর্বাদও যমুনা। নদী শুধু নিতে জানে না, দিতেও জানে। এ যমুনাই পলি জমিয়ে সেখানে সোনার ফসল ফলাতেও সহায়তা করেছে এলাকার মানুষকে। জেগে ওঠা এসব চরে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম শেষে যমুনা আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় নদীপাড়ের মানুষের জীবনে।

চরে পলি পড়া জমিতে পাট, ভুট্টা, সরিষা, বাদাম ও বোরোসহ অন্যান্য ফসল আবাদের জন্য খুবই উপযোগী। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও পুঁজি পেলে এসব ফসল চাষের পরিধি আরও বিস্তৃতি লাভ করবে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা লোকসান পোষাতে মৌসুমের শুরুতেই আটঘাট বেঁধে চরের জমিতে নিরলসভাবে শ্রম ব্যয় করেন।

জেলা বা উপজেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় এখানকার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না কৃষক।

নাটুয়াপাড়া চরের হাট অবশ্য বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে পাট ও মরিচের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে নাটুয়াপাড়া চরের হাট। পণ্যসামগ্রী নিয়ে নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। অনেক সময় ডাকাতের কবলে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এজন্য অনেক ব্যবসায়ী চরের হাঁটে আসতে চান না। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে ব্যবসায়ীদের মিলনমেলা ঘটবে এ হাটে।

চরে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে স্বাবলম্বী চরের অনেক কৃষক। তাদের ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। এমনই এক কৃষক আকতার হোসেন। নদীতে বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব কৃষক আকতার জেগে ওঠা চরে পাট ও আমন ধানের পর এবার বোরো ধান রোপণ করেছেন।

ট্রাক্টরচালক ওসমান গনি বলেন, চরের জমিতে ফসল ফলিয়ে অনেকেই অর্থ-বিত্তসম্পন্ন। তিনি ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করেন। তিনি বলেন, উৎপাদিত ফসলে নিজের চাহিদা মেটানোর পর তা সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের নানা হাটে বিক্রি করি। চরে শুধু ফসল হয় না। এখানে গড়ে উঠেছে স্কুল, মাদরাসা, খামার ও চাতাল। ঘরে ঘরে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জের রূপসী পশ্চিম চরের সাইফুল ইসলাম বলেন, এনজিও থেকে ৭ হাজার ২৬০ টাকা ঋণ নিয়ে ৬৬ শতক জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে মরিচের দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি, ঋণ পরিশোধ করে এবার অনেক লাভবান হওয়া যাবে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উপ-পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, এ বছর যমুনা নদীতে সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে ফসলের ভালো ফলন হয়েছে। এখানে আবাদ করতে খুব বেশি টাকার প্রয়োজন পড়ে না। বর্ষা মৌসুমে চরগুলো পানিতে ডুবে থাকে। ডুবে যাওয়া চরে ব্যাপক হারে পলি জমে। পানি চলে যাওয়ার পর চাষিরা নানা ফসল আবাদে মন দেন। জমিতে পলি পড়ায় ক্ষেতে সারও কম লাগে। এতে কৃষকরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০