শেয়ার বিজ ডেস্ক: ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় কমানো ও ব্যয়-আয় অনুপাত কমানোর তাগিদ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে তিনি ব্যাংক খাতের কর্তা ব্যক্তিদের খেলাপি ঋণ (এনপিএল) নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন। কারণ সামনের দিনগুলোয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কঠিন হবে বলে মনে করেন তিনি।
পাশ্ববর্তী দেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর অপ্রয়োজনীয় কমানো উচিৎ। দেশে অর্থায়নের বিকল্প উৎস হিসেবে একটি বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা কামনা করেন।
গতকাল (মঙ্গলবার) এক ভিডিও সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের এসব পরামর্শ দেন। করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি তার সাবেক গতিধারায় ফিরিয়ে আনা ও ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ সর্বোত্তম পন্থায় অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে বিতরণের বিষয়ে এ ভিডিও সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার ও ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সভপতি ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখার। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিএবি ও এবিবির সভাপতি সরকার ঘোষিত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের প্রসংশা করেন। এ প্রণোদনা দেশের মোট জিডিপির সাড়ে তিন শতাংশ।
ব্যবসায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় তারল্য যোগান দেওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান এবিবি সভাপতি। তারল্য যোগান নিশ্চিতে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নগদ জমার হার (সিআরআর) সাড়ে পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে চার শতাংশ নির্ধারণ করেছে। বাড়তি দেড় শতাংশ অর্থ ব্যাংকগুলো প্রণোদা কর্মসূচির ঋণ হিসেবে বিতরণের সুযোগ পাবে।
একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেপোর সুদহার ছয় শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এসব কার্যক্রম ব্যাংকগুলোর দক্ষ তহবিল ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এবিবি সভাপতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নীতি সহায়তার ফলে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে গ্রাহকরা আমানতের টাকা অধিকহারে তুলে নিলেও ব্যাংকগুলোকে সমস্যায় পড়তে হয়নি।
গম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ব্যাংকগুলো যে ঋণ বিতরণ করবে, তার সুরক্ষায় একটি ঋণ ঝুঁকি নিশয়তা প্রকল্প (সিআরজিএস) চালুর বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ জানান এবিবি সভাপতি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক খাত হচ্ছে অর্থনীতির ধমনী। কাজেই অর্থনীতিকে করোনা পূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার তার সাধ্যের মধ্যে সবকিছু করবে এ খাতের জন্য। বিএবি সভাপতি নিশ্চিত করে বলেন, তারা অর্থমন্ত্রীর সব উপদেশ ও পরামর্শ পরিপালন করবেন।
ভিডিও সম্মেলনে যেসব সুপারিশ ও পরামর্শ উঠে এসেছে, সেগুলো বাস্তবায়নের পন্থা নির্ধারণে শিগগিরই বিএবি ও এবিবি সভাপতি বৈঠক করবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের প্রস্তুতি নিতে বিএবি ও এবিবি সভাপতি অনুরোধ জানাবেন এবং প্রণীত সুপারিশ ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ বরাবর পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর বাস্তবায়ন বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য ভিডিও সম্মেলনে উত্থাপন করেন। তিনি জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংক খাতের কার্যক্রম চলমান রাখতে যা যা করণীয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা ও পরামর্শ দানে কেন্দ্রীয় প্রস্তুত রয়েছে।
আলী রেজা ইফতেখার বলেন, অর্থনীতিতে টাকা সরবরাহে ব্যাংক ছাড়া বিকল্প কোন উৎস নেই। কাজেই করোনা মহামারির পর অর্থনীতি পুনরুদ্ধানে বর্তমানে এ খাতের আর্থিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।##