পুঁজিবাজার খুলছে না

ছুটির মধ্যে লেনদেন চালুর প্রস্তুতিই নেই

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: করোনাভাইরাসের কবলে পড়ে প্রায় দেড় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো গত ২৬ মার্চ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ রয়েছে। স্বল্প পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু থাকলেও পুঁজিবাজারে লেনদেন চালুর ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তাই লেনদেনের অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে চিঠি দিয়েছিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ডিএসই কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছুটির মধ্যে লেনদেন না করার। ডিএসই সূত্র বিষয়টি জানিয়েছে।

## লেনদেন চালু হলে সেল প্রেশারে বিনিয়োগকারীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন

## বিএসইসির কমিশন শূন্য, অনুমতি দেবেন কে : রকিবুর রহমান

## লেনদেন সচল হওয়া উচিত : আবু আহমেদ

জানা গেছে, ছুটির মধ্যে লেনদেন চালুর কোনো প্রস্তুতি নেই বিএসইসি, ডিএসই ও সিএসই কারওই। তাই এ সময়ে লেনদেন চালুর সম্ভবনা কম বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করার জন্য তিন ভাগের দুই ভাগ ব্রোকারেজ হাউসের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু বর্তমানে কিছু হাউস মালিক লেনদেন চালুর কথা বললেও বেশিরভাগ মালিকই এটা চাচ্ছেন না।

কারণ অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটিতে ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন। এ পরিস্থিতিতে পরিবহন ব্যবস্থাও নেই, যে কারণে তারা ঢাকায় ফিরতে পারছেন না। তাই তারা চাচ্ছেন সরকারি ছুটি শেষ হওয়ার পর লেনদেন চালু করতে।

অন্যদিকে দেশে করোনা পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে যদি লেনদেন চালুর পর তা আবারও বন্ধ করতে হয়, তখন ঢাকায় ফেরা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিপদে পড়ে যাবেন। কারণ তখন তারা আবার গ্রামে ফিরে যেতে পারবেন না।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা বলেন. আমি এখন পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছি। লেনদেন সচল হলে বাধ্য হয়েই যে কোনো উপায়ে হয়তো পরিবার রেখেই ঢাকায় ফিরতে হবে। কিন্তু লেনদেন যদি আবারও বন্ধ হয়, কিংবা দেশের অবস্থা যদি খারাপ হয়, তখন আমরা গ্রামেও ফিরে আসতে পারব না। ঢাকাতেও সবার ভালোভাবে থাকার ব্যবস্থা নেই। তাই আমার মনে হয় একবার সরকারি ছুটির পরই লেনদেন চালু করা উচিত।

এদিকে লেনদেন চালু করার জন্য বিএসইসির কার্যক্রম চালু হওয়ার পাশাপাশি তাদের পক্ষ থেকে অনুমতি প্রয়োজন। বিএসইসি সচল না হলে লেনদেন চালু করা সম্ভব নয়। কারণ লেনদেন করার জন্য বিএসইসির সার্ভিলেন্স দরকার। অন্যদিকে বিএসইসি সচল হলেও বাধা থাকবে কমিশন শূন্যতা। বর্তমানে বিএসইসিতে একজন চেয়ারম্যান ও একজন কমিশনার রয়েছেন। ফলে নিয়ম অনুযায়ী তারা সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। সিদ্ধান্ত দিতে হলে কোরাম পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। দুজন কমিশনার ও চেয়ারম্যান থাকলে এটা সম্ভব।

বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা চাচ্ছেন লেনদেন হোক, কিন্তু বিএসইসিতে কমিশন শূন্য। লেনদেন চালুর সিদ্ধান্ত কে দেবেন? সরকার যদি কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় অনুমতি দেয়, সেটা ভিন্ন কথা।

এদিকে করোনার বৈরী পরিস্থিতি এবং সামনে ঈদ থাকায় লেনদেন চালু হলে সেল প্রেশারে বাজার পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। কারণ সবাই শেয়ার বিক্রি করে অর্থ ক্যাশ করতে চাইবেন। সে কারণে লেনদেন ঈদের পরে হলেই মঙ্গল বলে মন্তব্য করেন তারা। তবে এ বিষয়ে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ।

তিনি বলেন, মার্কেট যখনই খোলা হয় তখনই খারাপ-ভালো দুটোই হতে পারে। পৃথিবীর কোথাও পুঁজিবাজার এভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা হয়নি। বিনিয়োগকারীদের কথা বিবেচনা করে লেনদেন চালু করা উচিত।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মে ডিএসই কর্তৃপক্ষ লেনদেন চালু করার জন্য বিএসইসিতে চিঠি দেয়। সেখানে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে লেনদেন চালু করার বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে অনেক বিষয়ে অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। বিএসইসি চিঠিটি পর্যালোচনা করেছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত পর্ষদ সভায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে আগামী ১০ মে থেকে পুঁজিবাজারের লেনদেন চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় ডিএসই। সম্প্রতি ডিএসই’র ম্যানেজমেন্ট করোনা পরিস্থিতিতে লেনদেন চালু করা যায় কি না, সে বিষয়ে একটি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করেছে।

সে রিপোর্ট অনুযায়ী ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ ১০ মে লেনদেন চালুর বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। ওই বৈঠকে লেনদেন চালু করার বিষয়ে বিএসইসি’র অনুমতি নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০