করোনায় স্থবির গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর: করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট সংকটে লক্ষ্মীপুরে কৃষি উৎপাদন ও বিকিকিনি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষক।

এদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জমিতেই বেশিরভাগ সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাজারে ক্রেতা মিলছে না, তাই কৃষক পর্যায়ে পাইকাররাও যাচ্ছেন না, এমনটিই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতি।

S

একদিকে করোনা, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চলতি মৌসুমে বোরো ধান, পাট, শসা, মুলা, লালশাক, পালংশাক, বেগুন, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লাউ, বরবটি, ওলকপি, মিষ্টিকুমড়া, করলা, শিম, ঢেঁড়স, ধুন্দল, তরমুজসহ কৃষি ফসলের কাঙ্খিত উৎপাদন ও বিপণন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষিনির্ভর গৃহস্থ পরিবার ও কৃষি শ্রমিকরা। এভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী কৃষি উৎপাদন নিয়েও সংকট হবে বলে শঙ্কায় রয়েছেন এখানকার কৃষক।

S

জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, প্রতি বছর এ অঞ্চলে সবজি উৎপাদিত হয় প্রায় ৬৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, যার গড় মূল্য প্রায় ২১২ কোটি টাকা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মাঝেও লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলায় এবার শাকসবজির ভালো আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার আবিরনগর, টুমচর, শাকচর, মিয়ারবেড়ি, চরভ‚তি, ভবানীগঞ্জ, তেওয়ারিগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় সারা বছর ধরে শাকসবজির চাষ হয়। জেলার সবচেয়ে বড় সবজির হাট সদর উপজেলার পিয়ারাপুর।

সপ্তাহে চার দিন হাট বসত এ বাজারে। স্থানীয় কৃষক সরাসরি এ হাটে তুলতেন তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য। পাইকারি দরে বিক্রি করতেন তারা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এসব শাকসবজি ট্রাক-পিকআপ করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করতেন।

কিন্তু এ মৌসুমে করোনার প্রভাবে হাটটি একেবারেই ফাঁকা। এবার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে পরিবহন সংকট ও বাজারে পাইকারি ক্রেতা না থাকায় সবজিচাষি লোকসানের মুখে পড়েছেন।

লোকসানের আশঙ্কায় ক্ষেতের পাশে নিজেরাই দোকান সাজিয়ে বসছেন অনেক কৃষক। অনেকে ভ্যানে করে সবজি ফেরি করছেন, কিন্তু সেখানেও ক্রেতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। করোনা-আতঙ্কে এখন ক্রেতা-বিক্রেতার পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

এছাড়া সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং ব্যবস্থার কারণেও ব্যবসায়ীরা টাকার অভাবে এসব ব্যবসায় অর্থ লগ্নি করতে পারছেন না। বাজারে টাকার প্রবাহ কমে যাওয়ায় ক্রেতার অভাব পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এদিকে ক্রমাগত লোকসানের কারণে কৃষকরা জমিতে নতুন করে ফসল উৎপাদনেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন। এ পরিস্থিতি বিরাজ করলে আগামী আমন ধান উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সদর উপজেলার চরভ‚তি গ্রামের কৃষক হোসেন মিয়া জানান, রমজান উপলক্ষে তিনি এবার তিন একর জমিতে টমেটো ও এক একর জমিতে শসা চাষ করেছেন। ধারদেনা করে জমি ইজারা নিয়ে শুরুতেই প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আবাদ শুরু করতে দেরি হয়।

মৌসুমের মাঝামাঝিতে আবারও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং একই সঙ্গে করোনার প্রভাব। এতে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।

একই উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফ পাটোয়ারী জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও করোনার প্রভাব দুটোই পড়েছে কৃষকের ওপর। পাইকার না পাওয়ায় জমি থেকে ফসল সংগ্রহ করেও নষ্ট হচ্ছে। আবার প্রতিক‚ল আবহাওয়ার কারণে জমিতে ফসল নষ্ট হচ্ছে।

সদর উপজেলার বশিকপুর গ্রামের পাইকার সবজি ব্যবসায়ী দীন ইসলাম জানান, ২০ বছর ধরে সবজি ব্যবসা করে তিনি সংসার চালাচ্ছেন। এ বছরের মতো এমন সমস্যার সম্মুখীন কখনও হননি।

তিনি আরও জানান, ভবানিগঞ্জ ইউনিয়নের এক কৃষকের কাছ থেকে তিনি চার মণ শসা, এক মণ ধুন্দল ও তিন মণ টমেটো সংগ্রহ করেছেন। বাজারে ক্রেতা না থাকায় গত তিন দিনে তিনি ছয় কেজি শসা আর পাঁচ কেজি টমেটো লোকসানে বিক্রি করেছেন। বাকি সবজিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বেলাল হোসেন খান জানান, করোনার প্রভাবে কৃষকের উৎপাদিত ফসল বেচাকেনায় কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক। দুর্যোগ কেটে গেলে কৃষক ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০