সব তালিকাতেই কাউন্সিলরের স্বজনদের প্রাধান্য

এইচ এম সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: সরকারি সুবিধা নেওয়ার মতো যত রকমের তালিকা আছে, সব তালিকাতেই নিজের স্বজনদের নাম বসিয়েছেন কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম নেহার। নিজের স্বজনদের প্রাধান্য দিয়ে বানাচ্ছেন তালিকা। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের এই কাউন্সিলর করোনা পরিস্থিতিতে ভিক্ষুক ও ভবঘুরে শ্রেণির মানুষজনের জন্য সরকারের চালু বিশেষ ওএমএস তালিকাতেও বাদ রাখেননি তাদের। তালিকার ২৯ নম্বরে রয়েছে কাউন্সিলরের আপন ভাই তাহের মিয়ার নাম। তার ছেলে প্রবাসী।

১১৯ ক্রমিকে রয়েছে তাহেরের স্ত্রী মুক্তা বেগমের নাম। ৩০ নম্বরে কাউন্সিলরের আপন ভাই জাহের মিয়ার নাম। তার ছেলে পুলিশে কর্মরত। কাউন্সিলরের চাচাতো ভাই আশরাফুল আলমের নাম রয়েছে ৩১ নম্বরে। তার রয়েছে ওষুধের ব্যবসা।

৩৩ নম্বরে রয়েছে কাউন্সিলরের আরেক চাচাতো ভাই ফজলু মিয়ার নাম। তারও তিন-চার ছেলে থাকেন প্রবাসে। ফজলু মিয়ার স্ত্রী আছিয়া বেগমের নাম আছে তালিকার ২৭ নম্বরে। কাউন্সিলরের চাচাতো ভাই আবদুল আহাদ ও আপেল মাহমুদের নাম রয়েছে ৫৩ ও ৫৪ নম্বরে।

এছাড়া ওই তালিকায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়াও ধনাঢ্য আরও অনেক লোকজনের নামই বসিয়েছেন কাউন্সিলর নেহার। ৩৩৭ নম্বরে নাম থাকা হেলিম মিয়ার দুই ছেলে ইউরোপ-আমেরিকা প্রবাসী। হেনেরা বেগমের তিন ছেলে সৌদি প্রবাসী এবং আরেক ছেলে বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত।

তার নামও রয়েছে তালিকার ৩৩৮ নম্বরে। তারা সবাই ওই ওয়ার্ডের ভাদুঘরের দাশপাড়া, সাহাপাড়া, নোয়াপাড়া, খাদেমপাড়া ও এলহামপাড়ার বাসিন্দা। পুরো ওয়ার্ডের তালিকায় সামর্থ্যবানের নামের ছড়াছড়ি রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কাউন্সিলরের এ ধরনের কীর্তিতে ক্ষোভও জমা হয়েছে এলাকার বঞ্চিত-হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম নেহার শুধু এই ওএমএস তালিকাতেই নয়, বয়স্ক ভাতার তালিকাতেও দেখিয়েছেন অন্যরকম কারিশমা। আপন ভাই-ভাবির নাম দিয়েছেন তালিকায়। তার আপন ভাই মতি মিয়া ও তার  স্ত্রীর আনোয়ারা বেগমের নাম রয়েছে ভাতা সুবিধভোগী তালিকার ২০৮৫ ও ২১৬৭ নম্বর ক্রমিকে। মতি মিয়ার ছেলে প্রবাসে রয়েছেন।

আপন আরেক ভাই মস্তু মিয়াও পাচ্ছেন বয়স্ক ভাতার সুবিধা। ২১৮৫নং ক্রমিকে থাকা মস্তু মিয়ার সন্তানও প্রবাসে রয়েছেন। তালিকার ২২৬০নং ক্রমিকে থাকা আরেক ভাই তাহের মিয়ার ছেলেরাও প্রবাসী। ভাতা পাচ্ছেন নেহারের চাচাতো ভাই ফজলু মিয়া। ২০৯৭নং ক্রমিকের ফজলু মিয়ার তিন ছেলে রয়েছেন প্রবাসে। তার চাচাতো ভাই আবদু মিয়ার দুই ছেলে প্রবাসী। কিন্তু বয়স্ক ভাতা সুবিধাভোগীর তালিকার ২০৫২ নম্বরে রয়েছে তার নাম।

শহর সমাজসেবা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলররাই মূলত তালিকা করেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম নেহার জানান, ‘বিশেষ ওএমএস তালিকার সংশোধনী দিয়েছি।

এখন যাকে খুশি তাকে দিলে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না।’ বয়স্ক ভাতার তালিকার বিষয়ে বলেন, ‘নিজেদের অসহায় বৃদ্ধ দু-একজনের নাম দেওয়া হয়েছে। আশপাশের দু-একটা লোকের নাম দেওয়া তো অপরাধ নয়। আর বৃদ্ধ মানুষ ছাড়া তো কারও নাম দিইনি।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ‘বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০