করোনায় বগুড়ার ফুল ব্যবসায়ীদের অর্ধকোটি টাকা ক্ষতি

পারভীন লুনা, বগুড়া: আট বছরেরও বেশি সময় ধরে গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গাঁদা ফুলের চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বগুড়া সদরের বাঘোপাড়া গ্রামের আমিনুর  ইসলাম বাবু।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় দেশের সব সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যানচলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। গত ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি কোনো ফুল বিক্রি করতে পারেননি।

এ সময়ের মধ্যে এক লাখেরও বেশি ফুল বাগানেই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তার প্রায় তিন লাখ টাকার লোকসান হয়েছে। শুধু আমিনুর নন, করোনাভাইরাসের কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন সারা দেশের মতো বগুড়ায় ১০ ফুলচাষি।

বাজারজাতকরণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত বগুড়ার প্রায় দেড় হাজার মানুষ। সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ নানা দিবসে বন্ধ থাকায় প্রতিদিনই লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

প্রতিটি নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, বাগানেই ফুল ফুটছে এবং সেখানেই ঝরে যাচ্ছে। মরা ফুলসহ গাছের ডাল কেটে ফেলে রাখা হয়েছে অনেক বাগানের পাশে।

ফুলচাষিদের কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার ফুলের বাজার গড়ে উঠেছে। দেশের ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়ে থাকে। রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্রমল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল দেশের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

এসব ফুল বিক্রির জন্য দেশজুড়ে ২০ হাজারের বেশি ছোট-বড় ফুলের দোকান আছে। এর মধ্যে বগুড়ায় আছেন প্রায় ১০০ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী। কিন্তু ফুল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় গত দুই মাসে বগুড়ার ১০টি নার্সারির প্রায় ৪০ লাখ টাকার ফুল বাগানেই নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থার উন্নতি না হলে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও ভয়াবহ হবে তাদের জন্য।

ফুলচাষি আমিনুর জানান, পড়ালেখা শেষ করার পর আট বছর হলো ফুল চাষ ও ব্যবসা করছেন তিনি। তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন  নার্সারি। অন্য সময়ে তিনি তার বাগানের ফুল বগুড়াসহ সিরাজগঞ্জ ও পাবনায় বিক্রি করতেন। 

করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে তিনি কোনো ফুল বিক্রি করতে না পারায় ক্ষতি হয়েছে তিন লাখ টাকার ওপরে। বাগানে সার ও কীটনাশক প্রদান, আগাছা পরিষ্কার এবং শ্রমিকদের মজুরি বাবদ দৈনিক খরচ পড়ে তিন হাজার  টাকার ওপরে। কিন্তু বর্তমানে তার আয় ঠেকেছে শূন্যের কোঠায়। এ অবস্থায় খরচ করে বাগান টিকিয়ে রাখা তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

বগুড়া জেলা ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জুয়েল হাসান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৫ মার্চ থেকে কোনো ফুলচাষি একটি ফুলও বিক্রি করতে পারেননি। সারা বছর ঢিলেঢালাভাবে ফুল বিক্রি হলেও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও পহেলা বৈশাখ ছাড়াও আরও বেশকিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল, সেগুলোও ধরতে পারিনি।

এতে শুধু বগুড়ার ফুল মার্কেটের ব্যবসায়ীরাই ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা লোকসানে পড়েছেন। বেশিরভাগ দোকানি বসে বসে তাদের পুঁজি শেষ করে ফেলছেন। সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছি আমরা।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০