আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরায় ব্যাপক ক্ষতি

প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে সাতক্ষীরায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চিংড়ি ঘের। ভেঙে পড়েছে ব্যাপক পরিমাণে গাছপালা। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কাচা ঘরবাড়ির। জেলার সর্বত্র রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আন্ত:জেলা সড়ক যোযোযোগ বন্ধ রয়েছে। ক্ষতি হয়েছে পাকা আমের। শহরের কামালনগরে গাছ চাপা পড়ে করিমন নেছা নামের এক মহিলা মারা গেছে।

## গাছ চাপায় মহিলার মৃত্যু ## বিস্তীর্ণ বেড়িবাঁধে ভাঙন

সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পদ্মাপুকুর, গবুরা ও আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কয়েকটি স্পটে কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া নদীর ভেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের চাউলখোলা এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০০ ফুটের মত এলাকা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে।

এছাড়া কামালকাটি ও চন্ডিপুর এলাকায় পানি ওভার ফ্লো হয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এছাড়া গাবুরা ইউনিয়নের জেলেখানি ও নাপিতখালী এলাকায় বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এছাড়া আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রকাটি, কুড়িকাউনিয়া, চাকলা, হিজলা, দিঘলাররাইট, কোলা ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকছে বলে নিশ্চিত করেছেন আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর আলিফ রেজা। সেগুলি মেরামতের চেষ্টা চলছে।

সাতক্ষীরা জেলার প্রায় সব এলাকায় কমবেশী গাছপালা ভেঙে পড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের তারের ওপর গাছ পড়ায় এবং খুটি উপড়ে পড়ায় জেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিসেবা। অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ী ও টিনের চাল উড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, ঘন্টায় ১০০-১২০ কিলোমিটার গতিবেগে বিকেল ৪টার পর থেকে সুন্দরবন উপকুলে আম্পান আছড়ে পড়ে। এরপর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ১৪৮ কিলোমিটার গতিবেগে পশ্চিম দিকে ঝড়ো হাওয়াটি জেলা শহরের ওপর আঘাত হানে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী জানান, আম্পনের কারণে নদীর পানি ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়ে নদীর প্রবল জোয়ারে মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের দাঁতনেখালি, দূর্গাবাটি, পদ্মপুকুর ও গাবুরার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কয়েকটি স্থানে উপচেপড়া পানিতে পানি ঢুকে বিস্তির্ণ এলাকা প্লাবিত করে। কাঁচা ও টিনের ঘরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গাছ-গাছালি উপড়ে রাস্তা-ঘাট ও বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়েছে, ১৪৫টি সাইক্লোন সেল্টার ও ১ হাজার ৭০০টি স্কুল কলেজসহ আশ্রয়কেন্দ্রে ৩ লাখ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় ১২ হাজার সেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি ১০৩ জনের মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।

মরিচ্চাপসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ও গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার দয়ারঘাট, হাজরাকাটি, কুড়িকাউনিয়া, মনিপুরি ও বিছট এলাকার ভেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সাথে নিয়ে তালিকা তৈরির কাজ করছে। তাদের কাছ থেকে তালিকা পেলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র জানা যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাধগুলো জরুরী সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানান জেলা প্রশাসক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০