বগুড়ায় আম্পানের প্রভাবে বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি

প্রতিনিধি, বগুড়া: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বুধবার রাতভর বগুড়ার ওপর দিয়ে বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। এতে মাঠে থাকা বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ধান কাটার অপেক্ষায় থাকা বগুড়া জেলার কাহালু ও শিবগঞ্জ উপজেলা এলাকায় ধানের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ওইসব এলাকার বিস্তৃত ক্ষেতের ধানগাছগুলো বাতাসে হেলে পড়ার পর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এজন্য ফলন পাওয়া নিয়ে কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলায় এবার এক লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। জেলায় জিরাশাইল, কাটারীভোগ, বিআর-২৯, ২৯সহ বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ হয়ে থাকে। এরই মধ্যে লাগানো বোরো ধানের ৬০ শতাংশ কাটা সম্পন্ন হয়েছে। বাকি যে ৪০ শতাংশ রয়েছে, তার কিছু অংশের ক্ষতি হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য তারা কাজ শুরু করেছেন।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আম্পানের প্রভাবে বুধবার দুপুর থেকে বগুড়ায় বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং রাতে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে।  আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৪৫ কিলোমিটার। বৃষ্টির কারণে শুধু ফসলেরই ক্ষতি হয়নি, শহরের নিম্নাঞ্চলও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বগুড়ায় অনেক আগেই বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলার দক্ষিণের উপজেলা নন্দীগ্রামে সবার আগে ধান কাটা শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে শেরপুর, শাজাহানপুর, সদর ও আদমদীঘি উপজেলায় ধান কাটা শুরু হয়। সাধারণত যেসব অঞ্চলে আলুর আবাদ হয়, সেখানে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ধানের আবাদ একটু দেরিতে শুরু হয়, যে কারণে কাটাও পড়ে দেরিতে। জেলার দুপচাঁচিয়া ও শিবগঞ্জ উপজেলায় আলুর আবাদ বেশি হয় বলে সেখানে ধান কাটা সবচেয়ে দেরিতে শুরু হয়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার চরকাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল জানান, ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষেতের ধানগাছগুলো মাটিতে পড়ে গেছে। এরপর বৃষ্টির পানিতে সেগুলো ডুবে গেছে। ধান রক্ষার জন্য অনেক কৃষক জমিতে আটকে পড়া পানি স্থানীয় খালে অপসারণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি জমিতে আটকে পড়া পানি দ্রুত সরানো যায়, তাহলে হয়তো কিছু ধান পাওয়া যাবে। তবে যদি আবারও বৃষ্টি হয় তাহলে একটি ধানও ঘরে তোলা সম্ভব হবে না।

বগুড়া সদর উপজেলার সন্দাবাড়ি গ্রামের কৃষক মনির মিয়া জানান, তার এলাকার বিআর-২৮-সহ অন্য জাতের ধান কাটা হলেও জিরাশাইলসহ চিকন জাতের ধান এখন মাঠে রয়েছে। তিনি বলেন, ঝড় আর বৃষ্টিতে মাঠে থাকা সিংহভাগ ধানই নষ্ট হয়ে গেছে।

বগুড়া আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ্ মো. সজীব হোসাইন জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আম্পান স্থলভাগে আঘাত হানার পর সেটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। এ কারণে বগুড়ায় আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক আবুল কাশেম আজাদ জানান, জেলায় এ পর্যন্ত ৬০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে আম্পানের প্রভাবে বয়ে যাওয়া ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে ধানের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হলো, তা নিরূপণের জন্য কাজ চলছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০