মো. আব্দুল কাদের খান: সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী , ঈদের আগের ও পরে গণ পরিবহন চলাচল সীমিত করা হয়েছে। যদিও ২ এপিল থেকেই সরকার কঠোরভাবে জরুরি প্রয়োজন ব্যতিত সকল পরিবহন বন্ধ রেখেছে। সরকার চাচ্ছে, যে ব্যক্তি যেখানে আছেন, তিনি সেখান থেকেই ঈদের আনন্দ উপভোগ করবেন এবং এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সচেতন। কিন্তু সাধারণ মানুষের যে ঢল তা রোধে তারা অনেকটা হিমসিম খাচ্ছে। করোনার মহামারি রোধে বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম প্রধান দেশের ন্যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যার্থাথই সিন্ধান্ত নিয়েছেন। আসুন দেখে আসি অন্যান্য মুসলিম প্রধানদেশগুলো করোনকলীন সময়ে ঈদের মধ্যে কি করছে:
ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোডো বলেছেন, সাধারণত ঈদের সময় কয়েক মিলিয়ন মানুষ জাকার্তা ছেড়ে যায়, আবার ফিরে আসে। কিন্তু এবার তিনি সাধারণ জনগণকে নিজেদের ও পারিবারিক সুরক্ষায় জাকার্তা না ছাড়ার অনুরোধ করেছেন এবং এ বিষয়ে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোরতর অবস্থানে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
সোদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ঈদ-উল-ফিতওে গোটা দেশজুড়ে ২৪ ঘণ্টা সান্ধ্য আইন (কারফিউ) জারি থাকবে । এমনিতেই রমজান মাসের শেষে ২৩ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত চলছে এই কারফিউ। ঈদ উদযাপনে করোনা সংক্রমণ যাতে না বাড়ে, তা নির্দিষ্ট করতেই এমন পদক্ষেপ বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মিশরসহ অন্যান্য মুসলিম দেশে ঈদ-উল-ফিতরের উৎসবে চলাচল ও সামাজিক মেলামেশার স্বাভাবিক সুযোগ থাকলে বেড়ে যাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি।
ঝুঁকি এড়াতে তাই এবার মধ্য প্রাচ্যেও বেশিরভাগ দেশ যেমন: বাহরাইন, ইরান, কুয়েত, লেবানন, ওমান, কাতার, ইরাক ও মিশরে ঈদে থাকবে কারফিউ। সোদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিন ও মিশর আগেই ঈদে কারফিউ বলবৎ করার ঘোষণা দিয়েছিল। এবার এই তালিকায় নাম লিখিয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাক। তার পথে হাটছে ইরান, লেবানান ও ওমান। মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে দেশজুড়ে সরকারিভাবে কয়েকদিন সাধারণ ছুটি চলবে এসব দেশে। আর ওই ছুটি চলাকালীন সময়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টার কারফিউ জারি থাকবে দেশগুলোতে। আগামী ২৮ মে পর্যন্ত অধিকাংশ দেশে থাকেব ২৪ ঘণ্টার এই কারফিউ।
বাংলাদেশ সরকারও ঈদে ঘরে ফেরার বিষয়ে ঘোষণা দিয়েছে। ‘যেখানে থাকবেন, সেখানেই ঈদ’ এ নীতিকে গুরুত্ব দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঢাকায় প্রবেশ ও বাহির হতে অনেকটা কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধওে সাধরাণ মানুষের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হিমসিম খাচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাচ্ছে সাধারণ জনগণকে এ বিষেয়ে সচেতন করতে। কেননা তার যদি সচেতন না হয় তাহলে এ বিশাল সংখ্যক মানুষের ঢল বন্ধ করা তাদের পক্ষে অনেকটা কঠিন হবে।
পাশাপাশি সাধারণ জনগনকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তারা নানান অযুহাতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন টেলিভিশন সাংবাদে দেখা যায়, অনেককেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তথাপি অনেকে পায়ে হেটে বা বিভিন্ন ওলি-গলি দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন ফেরিঘাটে দেখা গেছে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। যে কারণে শেষ পর্যন্ত ফেরী চলাচলও বন্ধ করা হয়েছে কোন কোন স্থানে। পুলিশ বাহিনীর বড় একটা সংখ্যা বর্তশানে করোনায় আক্রান্ত, তথাপি তারা জীবন বাজি রেখে এ দুর্যোগের সময় কাজ করে যাচ্ছেন।
আমি জানি না আমাদের কবে জ্ঞান ফিরবে। আপনাকে বুঝতে হবে বাড়ি যাচ্ছেন পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য। কিন্তু আপনি যদি একজন করোনা পজিটিভ আক্রান্ত রোগী হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আপনার প্রিয় সন্তান, মা-বাবাম ও স্ত্রীকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলছেন। আপনি আনন্দের পরিবর্তে কি তাদেরকে মৃত্যুর স্বাদ দিতে চান? আপনাকে বুঝতে হবে করোনা এমন একটি রোগ যার মাধ্যমে আপনি যেকোন মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারেন, তাই এর জন্য আমাদের প্রত্যেকের উচিত দায়িত্বশীল আচারণ করা ও সরকারকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করা।
আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার জীবন পরিবারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও অতিব জরুরি না হলে ভ্রমন থেকে বিরত থাকুন। এছাড়া আপনি যদি এ যাত্রায় বেচে যান তাহলে হয়তো এমন অনেক ঈদ পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে পারবেন।
লেখক : উন্নয়নকর্মী, পরামর্শক ও গবেষক