নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউনের কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান মার্চ ও এপ্রিল মাসের ভ্যাট রিটার্ন (দাখিলপত্র) সময়মতো জমা দিতে পারেনি। এসব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা ও সুদ ছাড়া রিটার্ন দাখিলের সুযোগ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী ৯ জুনের এসব রিটার্ন দাখিল করতে পারবে। মঙ্গলবার (২৬ মে) এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক সই করা এ সংক্রান্ত ‘বিশেষ আদেশ’ জারি করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, দেশে ৮ মার্চ করোনা রোগী সনাক্ত হয়। ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। লকডাউনের ফলে প্রায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান সময়মতো মার্চ ও এপ্রিল মাসের ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে পারেনি।
##৯ এপ্রিল পর্যন্ত মার্চ-এপ্রিলের রিটার্ন দাখিলে জরিমানা-সুদ দিতে হবে না
##এপ্রিলে রিটার্ন বেড়েছে ৩৪.৮১% আর রাজস্ব ২২.০৩%
##অনলাইনে দুইমাসের জরিমানা-সুদ মওকুফে সিস্টেম আপডেট করতে হবে
ভ্যাট আইন অনুযায়ী, পূর্বে প্রতিমাসের ১৫ তারিখের মধ্যে ভ্যাট রিটার্ন জমা দিতে হয়। না হয় ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। দিতে হয় প্রতিদিনের জন্য ২ শতাংশ হারে সুদ। জরিমানা থেকে বাঁচতে করোনা মহামারিতে জরিমানা ছাড়াই ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময় বৃদ্ধির অনুরোধ জানান ব্যবসায়ীরা। তবে আইন সংশোধন ছাড়া সময় বৃদ্ধি, জরিমানা ও সুদ মওকুফের সুযোগ নেই।
আরো পড়ুন-ভ্যাট রিটার্ন বেড়েছে ৩৪.৮১% আর রাজস্ব ২২.০৩%
আরো পড়ুন-বিলম্ব ভ্যাট-ট্যাক্স রিটার্ন জমায় সময় বৃদ্ধির ক্ষমতা পেল এনবিআর
তবে আপৎকালীন সময়ে জরিমানা ও সুদ ছাড়াই ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে ২০ মে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন ২০১২ এর ৬৪ ধারা সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআরকে সময়সীমা বৃদ্ধির ক্ষমতা দেয়া হয়। বিশেষ করে মহামারি, দুযোর্গ, দৈব-দুর্বিপাক বা যুদ্ধের সময় এ সময় বৃদ্ধি, সুদ ও জরিমানা মওকুফ করতে পারবে এনবিআর। সে অধ্যাদেশ অনুযায়ী এনবিআর মঙ্গলবার এ বিশেষ আদেশ জারি করেছে।
‘করোনাভাইরাস প্রার্দুভাব প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে জরিমানা ও সুদ আরোপ ব্যতীত মার্চ ও এপ্রিল কর মেয়াদের ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বর্ধিতকরণ’-শিরোনামে এ বিশেষ আদেশ জারি করা হয়েছে।

আদেশে বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব প্রতিরোধে সরকার আগামী ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মার্চ ও এপ্রিল কর মেয়াদের রিটার্ন যথাসময়ে দাখিল করতে পারেননি।’
আরো বলা হয়, ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৬৪ এর উপধারা (১) এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬ এর বিধি ৪৭ এর উপ বিধি (১) অনুযায়ী প্রত্যেক নিবন্ধিত ব্যক্তিকে প্রত্যেক কর মেয়াদের জন্য মেয়াদ সমাপ্তির অনধিক ১৫ দিনের মধ্যে মূসক দাখিলপত্র প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।’
‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৮৫ এর উপধারা (১) অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখের মধ্যে মূসক বা টার্নওভার কর দাখিলপত্র পেশ না করার ব্যর্থতা বা অনিয়মের ক্ষেত্রে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। মূসক আইনের ধারা ১২৭ অনুযায়ী কোন করদাতা নির্ধারিত তারিখের মধ্যে কমিশনারের নিকট প্রদেয় কর পরিশোধে ব্যর্থ হলে নির্ধারিত তারিখের পরবর্তী দিন হতে পরিশোধের দিন পর্যন্ত প্রদেয় করের উপর মাসিক ২ শতাংশ সরল হারে সুদ পরিশোধের বিধান রয়েছে।’
আদেশে বলা হয়, ‘অধ্যাদেশ ও জারি করা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৬৪ এর উপধারা (১ক) ও (১খ) ও প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বৈশ্বিক এ আপদকালীন সময়ে যে সকল প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র মার্চ ও এপ্রিল কর মেয়াদের দাখিলপত্র যথাসময়ে পেশ করেনি; সে সকল প্রতিষ্ঠানের দাখিলপত্র পেশের সময়সীমা ৯ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করলো। এ সময়ের মধ্যে দাখিলপত্র পেশের ক্ষেত্রে জরিমানা ও সুদ প্রদানের বাধ্যবাধকতা হতে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।’
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নি:সন্দেহে এটি এনবিআরের একটি সময়োচিত পদক্ষেপ। এটা প্রমাণ করে এনবিআর করদাতাবান্ধব। করদাতাদের পাশে আছে থাকবে। তবে করদাতাদের প্রতি অনুরোধ, কেউ যেন ভবিষ্যতে এ সুবিধার অপব্যবহার না করেন। করলে ভ্যাট রির্টানের স্বাভাবিক বা রেগুলার সাবমিশন হ্রাস পেতে পারে। এছাড়া এ আদেশের সাথে অনলাইন রির্টান ফরমটি সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে। তবে ভ্যাট আইনের এ সংক্রান্ত সংশোধন আইনটিকে পূর্ণতা দিল এবং কল্যাণকামী করলো।’
এনবিআর সূত্র জানায়, ১৫ মে পর্যন্ত সারা দেশে এপ্রিল মাসের রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৪২ হাজার ৬০০; যা আগের মাসের (মার্চ) ১১ হাজার বেশি। শতকরা হিসেবে দাখিলপত্র বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। আর এ সময় রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা; যা আগের মাসের চেয়ে ৭০০ কোটি টাকা বেশি। শতকরা হিসেবে রাজস্ব বেড়েছে ২২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। উল্লেখ্য, বর্তমানে অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার ৬২৪।
অনলাইনে বিলম্ব রিটার্ন দাখিল করলে জরিমানা ও সুদ অটো জেনারেট হয়ে যায়। বিশেষ আদেশে মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিলম্বে রিটার্ন দাখিলে জরিমানা ও সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অনলাইন সিস্টেম আপডেট করতে হবে। অন্যথায় মার্চ-এপ্রিলের রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের সাথে সাথেই সিস্টেমে দেখাবে-করদাতাকে জরিমানা ও সুদ দিতে হবে।
এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, বিশেষ আদেশে এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। আদেশে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পকে বিষয়টি শুধু অবগতির জন্য দেওয়া হয়েছে।
###