চুয়াডাঙ্গার ক্ষতিগ্রস্ত চাষির আম মোকামে পাঠানো শুরু

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: আম্পান, কালবৈশাখী ঝড় ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের গাছে থাকা অবশিষ্ট আম বিক্রির জন্য ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন মোকামে পাঠাতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

## সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন, মার্কেটিং অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর

জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও জেলা মার্কেটিং অফিসের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শুক্রবার থেকে জেলা মার্কেটিং অফিসার নিজে তদারকি করে ট্রাকের সামনে ‘জরুরি কৃষিপণ্য সরবরাহ’ নামে স্টিকার লাগিয়ে আম পাঠানো শুরু করেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে এক হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। এসব বাগান থেকে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৯ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আম। পাইকারি প্রতি মণ এক হাজার ২০০ টাকা হিসাবে বিক্রি করা হলে মোট মূল্য হবে ৮৯ কোটি ১০ লাখ টাকা।

সাম্প্রতিক ঝড়ে ১০ হাজার ৫৮৪ মেট্রিক টন আমের ক্ষতি হয়েছে, যার মূল্য ৩১ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।

চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিমসাগর আম পাঠানো শুরু হয়েছে। পৌর এলাকার মহিলা কলেজ পাড়ার কুদ্দুস মহলদারের বাগানসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আমবোঝাই পাঁচটি ট্রাক ছেড়ে গেছে। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও জেলা মার্কেটিং অফিস ট্রাক ভাড়া নির্ধারণ, নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছানো, মোকামের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ছাড়াও সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

আম ব্যবসায়ী শাহজাহান আলী জানান, কালবৈশাখী ঝড় ও আম্পানে আমবাগানের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, জেলা প্রশাসন ও মার্কেটিং অফিসের সহযোগিতায় চট্টগ্রামের হযরত বেলায়েত আলী শাহ ফার্ম, মেসার্স সাথী বাণিজ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে হিমসাগর ও গুঁটি (আঁটি) আম পাঠাচ্ছি। করোনার প্রভাবে বাজার কেমন হবে বলতে পারছি না।

চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট আম ব্যবসায়ী কুদ্দুস মহলদার বলেন, কালবৈশাখী ঝড় ও আম্পানের কবলে পড়ে আমে আমার ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমি চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসন ও মার্কেটিং অফিসের মাধ্যমে ক্ষতি কিছুটা পুশিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাই, তারা যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে জেলার আম ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেন। তিনি জানান, চট্টগ্রামের মার্কেটে গুঁটি আম প্রকারভেদে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে ও হিমসাগর ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা মহিলা কলেজ পাড়ার আমবাগানের শ্রমিক ইকতিয়ার আলী জানান, আমের মৌসুমে আমরা তিন-চার মাস ট্রাক সাজানোর কাজ করি। গাছ থেকে আম ভাঙ্গা ও ট্রাক সাজিয়ে যা পারিশ্রমিক পাই, তা দিয়ে সংসার চালাই। তবে এ মৌসুমে পরপর দুটি বড় ঝড়ের কারণে গাছে আম নেই বললেই চলে। এক সপ্তাহের মধ্যেই এ কাজ শেষ হয়ে যাবে।

ট্রাকচালক জাহিরুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে প্রায় দুই মাস ট্রাক চালানো বন্ধ আছে। আজ থেকে বিভিন্ন মোকামে আম পরিবহনের মাধ্যমে ট্রাক চালানো শুরু হলো।

এ জেলার হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের আমের চাহিদা রয়েছে দেশে-বিদেশে। করোনার কারণে আম বিক্রি নিয়ে চাষিরা দুশ্চিন্তা করলেও ন্যায্যমূল্য ও মোকামে পাঠানোর ব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এ দাবিসহ ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার প্রত্যাশা করছেন এখানকার আমচাষি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০