ইসমাইল আলী: কয়েক বছরে দেশে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী দ্রুত বেড়েছে। পাশাপাশি দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছে সরকার। যদিও এ লক্ষ্য থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এখনও রয়ে গেছে বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। বর্তমানে এর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। এতে বিদ্যুৎবিহীন জনগোষ্ঠীর শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ট্র্যাকিং এসডিজি ৭: দ্য এনার্জি প্রোগ্রেস রিপোর্ট ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ), ইন্টারন্যাশনাল রিনিউঅ্যাবল এনার্জি এজেন্সি (আইআরইএনএ), ইউনাইটেড ন্যাশনস স্ট্যাটেটিকস ডিভিশন, বিশ্বব্যাংক ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করেছে। ২০১৮ সালের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরেই প্রতিবেদনটি নিয়মিত প্রকাশ করা হচ্ছে। আর বরাবরই এ প্রতিবেদনে বিদ্যুৎবিহীন জনগোষ্ঠীর শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় থাকছে বাংলাদেশের নাম।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে বাংলাদেশে বিদ্যুতের সুবিধাভোগী দ্রুত বেড়েছে। এ সময়ে বিদ্যুৎ গ্রাহক বেড়েছে প্রতি বছর গড়ে চার শতাংশ হারে। এতে বিশ্বে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানকারী শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। এতে ২০১৮ সাল শেষে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। তবে ১৫ শতাংশ বা প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে।
যদিও ২০১৬ সালের শেষে ৭৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় ছিল। সে সময় বিদ্যুৎ সংযোগের বাইরে ছিল ৩ কোটি ৯২ লাখ মানুষ।
তথ্যমতে, ২০১০-২০১৮ সময়ে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কম্বোডিয়া। এ সময় দেশটিতে গড়ে আট শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসে। ২০১৮ সাল শেষে দেশটির ৯২ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় এসেছে। এ তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান। দেশটিতে ৯ বছরে গড়ে সাত শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসে। বর্তমানে দেশটির ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।
দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানকারী দেশের তালিকায় এরপর রয়েছে যথাক্রমে কেনিয়া, তৈমুর-লিস্টা, পাপুয়া নিউগিনি, কিরিবাটি, সোলোমন আইল্যান্ড, ইসওয়াতিনি, উগান্ডা, লেসোথো, বাংলাদেশ ও লাওস।
এদিকে বর্তমানে বিদ্যুৎবঞ্চিত দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে নাইজেরিয়া। দেশটির প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা কঙ্গোর ৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। দেশটির ৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানের ৬ কোটি ১০ লাখ, ইথিওপিয়ার ৬ কোটি, তানজানিয়ার ৩ কোটি ৬০ লাখ ও উগান্ডার ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে আছে। আর মোজাম্বিকের ২ কোটি ও মাদাগাস্কারের ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে রয়েছে। এ হিসেবে বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিবেচনায় তালিকায় অষ্টম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।
যদিও বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যানের সঙ্গে একমত নয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সংস্থাটি বলছে, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনটি অনেক পুরোনো তথ্যের ভিত্তিতে করা। বর্তমানে প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় রয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের অংশ হিসেবে ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য একদিনের মধ্যে বাসাবাড়ি বিদ্যুৎ সংযোগের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এতে খুব দ্রুত দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এদিকে রান্নার কাজে পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহারে অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ৯ বছরে গড়ে দুই শতাংশেরও কম হারে বেড়েছে পরিচ্ছন্ন জ্বালানির ব্যবহার। এতে ২০১৮ সাল শেষে মাত্র ২০ শতাংশ তথা সোয়া তিন কোটি মানুষ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করত। আর ১৩ কোটি মানুষ অপ্রচলিত জ্বালানি রান্নার কাজে ব্যবহার করছে, যা বিশ্বে চতুর্থ।
এ তালিকায় বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে ভারত। দেশটির ৭২ কোটি ৭০ লাখ তথা ৫৫ শতাংশ মানুষ অপ্রচলিত জ্বালানি রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের ৫৪ কোটি ৪০ লাখ ও তৃতীয় অবস্থানে থাকা নাইজেরিয়ার ১৭ কোটি ৩০ লাখ অপ্রচলিত জ্বালানি রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। এ তালিকায় পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। দেশটির ১১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ অপ্রচলিত জ্বালানি রান্নার কাজে ব্যবহার করছে।