শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ

অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বহু শিক্ষার্থী

হামিদুর রহমান : করোনা মহামারির কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। কিছু স্কুল অনলাইনে শিক্ষাব্যবস্থার আয়োজন করায় অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ থাকলেও ডিজিটাল ডিভাইস না থাকায় অনেকের পক্ষে সে সুযোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

রামপুরার রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. স্বপন সরকার বলেন, ‘বাবার বয়স হওয়ায় আগের মতো কাজে যেতে পারেন না। পরিবার থেকে পড়াশোনার সুযোগ না দিলেও ভালো স্টুডেন্ট হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই স্কুল ফান্ডের টাকায় পড়ালেখা করছি। এখন ভাইদের আয়ে চলতে হয়। তবে তারা আগের মতো খরচ দিতে পারে না। তাদেরও সংসার আছে, ছেলেমেয়ে আছে। আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। তার ওপর করোনা মহামারিতে ভাইদের আগের মতো কাজ নেই। কারওয়ান বাজারের পানের আড়তে কাজ করে কোনো রকম দিন কাটছে। এভাবেই জীবনসংগ্রাম করে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে অনলাইন ক্লাস কীভাবে করব?’

এদিকে একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা জানায় জামালপুরের বোরহানউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হƒদয় আহম্মেদ। শেয়ার বিজের সঙ্গে কথা হলে হƒদয় জানায়, ‘গ্রামে ইন্টারনেট সেবা তো দূরের কথা মোবাইলে কথা বলতেই নেটওয়ার্ক থাকে না। একবার কথা বলতে দু-তিনবার লাইন কেটে যায় (কলড্রপ)। স্কুল বন্ধ হওয়ায় পড়াশোনার অনেক সমস্যা হচ্ছে। ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে ক্লাসের সুযোগ নেই।’

দেশব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। অন্যান্য নিয়মিত পরীক্ষাও অনিশ্চিত। তবে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিকল্প হিসেবে অনলাইন শিক্ষার সুযোগ থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থী। এক্ষেত্রে শহরের তুলনায় মফস্বলের অবস্থা আরও করুণ।

সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে একশ্রেণির শিক্ষার্থী ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ পেলেও যেসব পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল নয়, সেসব নিন্মআয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা অনলাইন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেননা মফস্বলে অনেক পরিবার আছে দিন আনে দিন খায়, টাকার অভাবে স্কুল ড্রেস কিনে দিতে ব্যর্থ এবং অনলাইনে শিক্ষার বিষয়ে অনেক পরিবার চিন্তাও করতে পারে না। এছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও শিক্ষা খাতে দেশ এখনও পুরোপুরি ডিজিটালাইজ্ড হয়নি। অন্যদিকে মফস্বলের অনেক এলাকায় এখনও নেটওয়ার্ক না থাকায় মোবাইল ফোনে কথা বলতেও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

তারা আরও জানান, এ মহামারি যদি আরও দীর্ঘ হয় তাহলে শিক্ষা খাতে বড় রকম প্রভাব পড়বে। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন মাসে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। জীবিকা অর্জন কঠিন হলে অনেক পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখাবে না। তাই শিক্ষা খাতে সরকারের প্রকৃত বরাদ্দ বাড়ানো উচিত, যাতে গরিব মেধাবী মুখ ঝরে না পড়ে। 

কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, শহরে নি¤œআয়ের অনেক পরিবার এখন শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হচ্ছে। যেক্ষেত্রে অনেক পরিবার তিন বেলা খাবার জোগাতে ব্যর্থ, সেখানে অনলাইনে পড়াশোনার জন্য ডিজিটাল ডিভাইস ক্রয় করা তাদের সাধ্যের বাইরে। অন্যদিকে মফস্বলে অনেক শিক্ষার্থী এখনও প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত নয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০