নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদে গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন। তাৎক্ষণিকভাবে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সানেম।
প্রতিক্রিয়ায় সানেম জানিয়েছে, এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু সেটি যথেষ্ট কি না, সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। কারণ আমরা যে বড় ধরনের স্বাস্থ্যগত সংকট দেখছি এবং সেই সংকট মোকাবিলায় আমাদের যে অস্থিরতা, অদক্ষতা ও সক্ষমতার অভাব দেখছি, এটা কিন্তু এক দিনে হয়নি, এটা দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ফলাফল।
আমাদের স্বাস্থ্য খাত, বিশেষ করে সরকারি স্বাস্থ্য খাতকে দীর্ঘদিন অবহেলা করা হয়েছে এবং আমরা বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতেও দেখছি দায়বদ্ধতার একটা বড় ধরনের অভাব। এই যে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ফলাফল, সেটারই প্রতিফলন আমরা দেখছি এই স্বাস্থ্য সংকটে এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বেহাল দশায়।
ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন না ঘটলে এই বর্ধিত বরাদ্দ সত্যিকার অর্থেই কতটুকু কার্যকর হবে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমরা বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। সংসদে বাজেট অধিবেশনে যে বিভিন্ন রকমের দাবি করা হচ্ছে যে, বিভিন্ন হাসপাতালকে কভিড-১৯
হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে, আসলেই তারা প্রস্তুত কি না? আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্টে দেখছি, ঘোষণা ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ধরনের ফারাক রয়ে গেছে।
বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, এটাকে আমি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করি এবং সাধুবাদ জানাই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সামাজিক সুরক্ষা খাতের যে বরাদ্দ, সেটির একটা বড় অংশ কিন্তু পেনশন-ভাতার দিকে যায়। সুতরাং প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ কতটুকু বেড়েছে? যে সংকট আমরা দেখছি, সেই সংকটে একটা বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী কিন্তু দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে গেছে এবং সামনের দিনগুলোয় আরও বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যসীমার নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে; বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠী কাজ হারিয়েছে। সুতরাং এই জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় আনা যায়, বিশেষ করে এখন যখন জোনিং করা হচ্ছে, কীভাবে তাদের খাদ্য ও নগদ সহায়তা দেওয়া যায় বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
আরেকটা বিষয়, রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সানেম মনে করে সেটা খুব বাস্তবসম্মত নয়। এমনকি সংশোধিত বাজেটে যে রাজস্ব আদায়ের কথা বলা হয়েছেÑআমরা মনে করি যে সংকটটা দেখছি, তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়।
বাজেটে আট দশমিক দুই শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটিতে এই প্রশ্ন তৈরি হয় যে, আমরা কি অনুমান করে নিচ্ছি যে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আট শতাংশের ওপরে যে গতিধারায় ছিল সেখানে ফিরে আসবে? তার অর্থ হচ্ছে অর্থনীতি আবার দ্রুত সচল হয়ে উঠবে, যেটাকে আমরা ‘ভি শেপ্ড রিকভারি’ বলি। বাস্তবতা কী তা বলছে কি না, সেটা একটা প্রশ্ন থেকে যায়। আমরা দেখছি, স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, বিশেষ করে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ছে এবং কবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চালু করা যাবে, সেটি নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে।