রহমত রহমান: দেশে অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেলগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্সের। এছাড়া রয়েছে আমাজন প্রাইম, ভারতীয় জি-৫ সিরিজের কয়েকটি চ্যানেল, হইচই, টিকটক প্রভৃতি। সব ধরনের বিনোদন পেতে গ্রাহকরা বিদেশি এসব চ্যানেল সাবস্ক্রিপশন করে থাকে। নির্ধারিত সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে এসব চ্যানেল দেখতে হয়। এতে কোনো ধরনের ভ্যাট ছাড়াই বিপুল পরিমাণ টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এখন থেকে এসব চ্যানেল সাবস্ক্রিপশন করতে হলে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট পরিশোধ করতে হবে। বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ডে সাবস্ক্রিপশন ফি জমা দিলে ব্যাংক সেখান থেকে ভ্যাট কর্তন করবে। এ ভ্যাট কর্তন করতে সম্প্রতি সব ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সব ব্যাংককে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সূত্রমতে, ‘নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, জি-৫ প্রভৃতি অনলাইনভিত্তিক বিনোদন চ্যানেলের সাবস্ক্রিপশনের বিপরীতে পরিশোধযোগ্য ভ্যাট কর্তন’ করতে ১১ জুন বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর আহমেদ জামাল বরাবর চিঠি দেন।
অপরদিকে, অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্সেরও এ-জাতীয় সার্ভিসের মাসিক বিল পরিশোধের ওপর ভ্যাট কর্তন বিষয়ে জানাতে এনবিআর থেকে সব ভ্যাট কমিশনারেটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১০ মে এনবিআর সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) মো. জামাল হোসেনের সই করা চিঠি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিস নেটফ্লিক্স ও এ-জাতীয় অনলাইন সার্ভিস বেশ কিছু সময় ধরে বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে এ সার্ভিসগুলোর লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে, যা ক্রমেই বাড়ছে। নেটফ্লিক্স ও এ-জাতীয় অন্যান্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কর্তৃক প্রদত্ত সেবা মূসক আইন, ২০১২ অনুযায়ী একটি ভ্যাট আরোপযোগ্য সেবা। সাধারণত সাবস্ক্রাইবাররা আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে এ ধরনের সেবার মূল্য বা ফি প্রদান করেন। যেসব সাবস্ক্রাইবার স্থানীয় ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে ফি পরিশোধ করেন, সেসব ক্ষেত্রে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ফি’র অর্থ নেটফ্লিক্স বা অন্যান্য সেবা প্রদানকারীকে পরিশোধের আগে উৎসে ভ্যাট কর্তন করে তা যথাযথ অর্থনৈতিক কোডে জমা প্রদান করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ব্যাংক এ আইনি বাধ্যবাধ্যকতা প্রতিপালন করছে কি না, তা জানা প্রয়োজন। অতএব আপনার কমিশনারেটের অধিক্ষেত্রে অবস্থিত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এ-জাতীয় ফি পরিশোধের আগে উৎসে ভ্যাট কর্তৃক করে কি না এবং করে থাকলে অদ্যাবধি ব্যাংক কত টাকা ভ্যাট কর্তনপূর্বক জমা প্রদান করেছে, তার বছরওয়ারি তথ্য আগামী সাত দিনের মধ্যে সংগ্রহপূর্বক এনবিআরকে জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ড দ্বারা যে অর্থ পরিশোধ করা হয়, সেই টাকা থেকে ভ্যাট কীভাবে পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়েও ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে এনবিআরকে জানাতে বলা হয়।’
মূসক গোয়েন্দার চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘দেখা যাচ্ছে, এসব সাবস্ক্রিপশন ফি’র বিপরীতে এনবিআর কোনো মূসক পাচ্ছে না। এ সেবাটির মূল্য পরিশোধ কার্যক্রমটি যেহেতু মূলত ক্রেডিট কার্ডনির্ভর, তাই সব বাণিজ্যিক ব্যাংক পরিশোধিত মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায়পূর্বক ট্রেজারিতে পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় এ বিষয়ে তারা কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছে না বলে জানা যায়। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে মূসক আদায় করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হলো।’
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য মো. জামাল হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নেটফ্লিক্স ও এ-জাতীয় অনলাইন সার্ভিসের সাইস্ক্রাইবার প্রতিনিয়ত বাড়ছে। গ্রাহকদের থেকে বিল নেওয়া হয়। এ সেবা থেকে ভ্যাট কর্তন হচ্ছে কি না, তা জানাতে কমিশনারেটগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কর্তন নিশ্চিত করতে সব ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে।’
মহাপরিচালক সৈয়দ মুসফিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘নিয়ম থাকলেও ভ্যাট কর্তন করা হয় না। ফলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের অনুরোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের বিষয়টি জানানো শুরু করেছে। আশা করি ভালো রেসপন্স পাব।’
ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর অনলাইন স্ট্রিমিং সাইটগুলোর বিলের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা হয়। কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কোনো নির্দেশনা না দেওয়ায় তা আদায় হতো না। ভ্যাট গোয়েন্দার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে ভ্যাট কর্তন করতে নির্দেশে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো এ সেবা গ্রহণকারী এবং ক্রেডিট কার্ডের মধ্যে বিল পরিশোধকারী গ্রাহকদের চিঠি দিয়ে ভ্যাট আদায়ের বিষয়টি জানিয়েছে। ফলে এখন থেকে গ্রাহককে ভ্যাট দিতেই হবে। নেটফ্লিক্সের সর্বনি¤œ গ্রাহক ফি মাসে আট ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৮০ টাকা (৮৫ টাকা ডলার ধরে)। এর ওপর ভ্যাট দিতে হবে ১০২ টাকা।
বেসরকারি ব্যাংক সূত্র জানায়, বিনোদনমূলক এসব বিদেশি চ্যানেলের তালিকা করা হয়েছে, যেসব সেবার বিপরীতে ভ্যাট কাটা হবে। এর মধ্যে জনপ্রিয় সেবার মধ্যে রয়েছে-নেটফ্লিক্স, আমাজন প্রাইম, হইচই, টিকটক, গুগলমিট, জুম, স্কাইপি, স্ল্যাক প্রভৃতি। মূলত অনলাইনে অর্থ ব্যয় করে এ ধরনের যেকোনো সেবার ক্ষেত্রেই ভ্যাট দিতে হবে। এ তালিকায় রয়েছে বিদেশি পত্রিকাও।’